আমি পরম ভাগ্যবান, কারণ কিছু অসাধারণ মুহূর্ত স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীর সঙ্গে অতিবাহিত করেছি। যদিও ছয় দশক অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, তবুও সেই স্মৃতিগুলি আমার হৃদয়ে এখনো একইভাবে সজীব।
১৮৯৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদগণ আলমবাজার মঠেই ছিলেন। কিন্তু ভূমিকম্পে তা বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় এবং সেখান থেকে গঙ্গা পার হয়ে বেলুড়ে এসে
কঠোর পরিশ্রমের ফলে অত্যন্ত ভগ্নস্বাস্থ্য হওয়া সত্ত্বেও স্বামীজী পূর্ণ উদ্যমে গুরুভাইদের সাহায্যে মঠের জন্য উপযুক্ত জমির সন্ধান করতে থাকেন। ২৬ মার্চ মিসেস বুলকে তিনি লিখলেন : “আমি শুধু আমার মঠটি চালু করতে দৃঢ়সংকল্প এবং সে কাজ সারা হওয়া মাত্র আমি আবার আসব।”
মার এক আত্মীয় ছেলেকে এবং আমাকে ললিতবাবু বাগবাজারস্থ ৫৩/২ বসুপাড়া লেনের বাসাবাড়িতে একদিন দিবাভোজে আমন্ত্রণ দেন।
১৮৯২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বরানগর থেকে মঠ আলমবাজারে উঠে আসে। স্বামীজী আমেরিকা থেকে মঠবাসীদের উদ্দেশে প্রথম চিঠি লেখেন ১৯ মার্চ ১৮৯৪।
‘সুদর্শনের’ আসরে সারদা মাতার জীবনের অল্প-স্বল্প ঘটনা সাক্ষাৎ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে উপস্থাপিত করব। পরের মুখে অম্বল নাই বা চাখলাম। মায়ের ব্যক্তিগত স্মৃতি ব্যক্তিটির পক্ষে মধুরতম স্মৃতি। অম্ল নয়।
শ্রীরামকৃষ্ণের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন বলরাম বসু। কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে ঠাকুর তাঁকে ‘আমার বলরাম’ আখ্যাও দিয়েছেন।
অবতার ও তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদরা মানবজাতির বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ। তাই তাঁদের বিচরণভূমি, জন্মস্থান, লীলাক্ষেত্র
মহাপ্রস্থানের দুদিন আগে স্বামী বিবেকানন্দের ঘোষণা—“এই বেলুড়ে যে আধ্যাত্মিক শক্তির ক্রিয়া শুরু
আমার বাবা যেহেতু নানান কর্মস্থলে ঘুরে ঘুরে কাজ করতেন তাই আমাদের বেশি সময় স্কুলে পড়া হয়নি। অর্ধেক সময় বাড়িতেই পড়েছি। আমি ক্লাস সেভেনে প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। যেহেতু বাবার বদলির চাকরি ছিল, সেহেতু বাবা বাড়িতেই মাস্টারমশাইদের দিয়ে আমাদের পড়ানোর ব্যবস্থা করছিলেন। সেসময় আমরা বাড়িতে যখন যা হাতের কাছে পেয়েছি পড়েছি।
উদ্বোধন সম্পর্কে প্রথম যে-স্মৃতির কথা মনে পড়ে, তা হলো একটি লেখা—বইটির বাইরে গেরুয়া রঙের প্রচ্ছদপট, তাতে বাগবাজারের ‘শ্রীশ্রীমায়ের বাড়ী’র ছবি ছাপা আর সেই লেখাটির কয়েকটি লাইনের সারমর্ম—“যিনি বারবার ভূপতিত হয়েও আবার উঠে দাঁড়াতে পারেন, তিনিই ঠিকঠিক ধার্মিক।” তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও এবং বহু স্মৃতি মুছে গেলেও এই কথাটি কিছুতেই ভোলা সম্ভব হয়নি৷
শ্রীরামকৃষ্ণ সকলের কল্যাণের জন্য জগৎকে যে আধ্যাত্মিক ভাব দিয়েছিলেন তাকে দৃঢ়ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সর্বসাধারণের মধ্যে বিতরণ করতে স্বামীজীর চেষ্টার অন্ত ছিল না। তিনি জানতেন, শিকাগোর ধর্মমহাসভায় তাঁর আবির্ভাব এবং ভারত-প্রত্যাবর্তনের সূত্রে যে ভাবান্দোলনের তরঙ্গ উঠেছে, তার প্রাবল্য বেশিদিন মানুষের মনে স্থায়ী হবে না। তাকে চিরজাগ্রত রাখতে হলে একটি প্রবল মাধ্যম প্রয়োজন, যার ভিতরে সেই শাশ্বত ভাব ও ভাষা ‘বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়’ জীবন্ত হয়ে উঠবে এবং মানব-মনে আনবে চিরশান্তির চেতনা।
শ্রীভগবানের কৃপায় ‘উদ্বোধন’ এবার, ১৩৭৯ সালের ১লা মাঘ নববর্ষে—৭৫তম বর্ষে পদার্পণ করিল। ভারতাত্মার প্রাণবাণীর যুগোপযোগী রূপ—নবযুগের ‘উদ্বোধনী’ প্রাণধারা—রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ-ভাবগঙ্গা হৃদয়ে ধারণ করিয়া স্বামী বিবেকানন্দ-প্রবর্তিত এই পত্রিকাখানি প্রথম আত্মপ্রকাশ করিয়াছিল ১৩০৫ সালের ১লা মাঘ, ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দের ১৪ই জানুআরি।
উদ্বোধন-এর প্রথম প্রকাশস্থল : ১৪ নং রামচন্দ্র মৈত্র লেন, কম্বুলেটোলা, কলকাতা-৭০০০০৪। ১ম বর্ষ থেকে ৮ম বর্ষের শেষ ভাগ (মাঘ ১৩০৫– কার্তিক ১৩১৩) পর্যন্ত এখান থেকে উদ্বোধন প্রকাশিত হয়।
সেই ঘটনা তো বহুবার আলোচিত হয়েছে। পূর্ববঙ্গের এক ভক্ত সুরেন্দ্রনাথ রায় শ্রীশ্রীমাকে চিঠিতে লিখেছিলেন তাঁর অসুস্থতার কথা। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের আগে একটিবার শ্রীশ্রীমায়ের দর্শনাকাঙ্ক্ষী তিনি। শ্রীশ্রীমা নিজের একটি ফটো এবং একবছরের বাঁধাই করা উদ্বোধন পাঠিয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, ভয় নেই, অসুখ সেরে যাবে। সুরেন্দ্রবাবু যেন ফটোখানি দেখেন ও উদ্বোধন পাঠ করেন।
ঠাকুর, মা ও স্বামীজীর কৃপায় আমার অশেষ সৌভাগ্য হয়েছিল— খুব কম বয়সে উদ্বোধন পত্রিকা সম্পাদনার কাজে যুক্ত হতে পেরেছিলাম। প্রথম থেকেই আমার এবিষয়ে ভয় ছিল; কারণ তখন আমার বয়স কম—মাত্র ছত্রিশ, অভিজ্ঞতাও কম।
বর্তমান মাঘ মাসে ‘উদ্বোধন’ পঞ্চাশ বৎসরে পদার্পণ করিল। এই উপলক্ষে ইহার সচিত্র সুবর্ণ জয়ন্তী সংখ্যা প্রকাশিত হইল। মহাসমন্বয়াচার্য শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অনুষ্ঠিত ও প্রচারিত ভাবাদর্শে ভারতের সর্বাঙ্গীণ অভ্যুদয় সাধনের উদ্দেশ্যে সকল নরনারীকে উদ্বুদ্ধ করিবার জন্য আচার্য স্বামী বিবেকানন্দ ‘উদ্বোধন’ প্রবর্তন করেন। এই কারণে ইহার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সর্বাগ্রে আমরা এই নব-যুগপ্রবর্তক আচার্যদ্বয়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করিতেছি এবং যে সকল দেশ-প্রসিদ্ধ মনীষীর সুচিন্তিত রচনা-সম্ভারে সমৃদ্ধ করিয়া এই সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হইল, তাঁহাদিগকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি। আশা করি, ইহা সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাগণের মনোরঞ্জন বিধান করিতে সমর্থ হইবে।
শ্রীভগবানের কৃপায় ও তাঁহার আশীর্ব্বাদ মস্তকে ধারণ করিয়া, আজ নূতন মাঘে উদ্বোধন তাহার পঞ্চবিংশতি বর্ষে পদার্পণ করিল। নবীন বর্ষে সে তাহার পাঠক-পাঠিকার নিকট শুভেচ্ছা ও ভাবের আদান প্রদান প্রার্থী।
শ্রীভগবানের কৃপায় ও তাঁহার আশীর্ব্বাদ মস্তকে ধারণ করিয়া, আজ নূতন মাঘে উদ্বোধন তাহার পঞ্চবিংশতি বর্ষে পদার্পণ করিল। নবীন বর্ষে সে তাহার পাঠক-পাঠিকার নিকট শুভেচ্ছা ও ভাবের আদান প্রদান প্রার্থী।
১৮৯৯ সালের ১৪ জানুয়ারি, ১ মাঘ ১৩০৫ বঙ্গাব্দ, শনিবার স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্ন-সম্ভূত উদ্বোধন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
১৮৯৯ সালের ১৪ জানুয়ারি, ১ মাঘ ১৩০৫ বঙ্গাব্দ, শনিবার স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্ন-সম্ভূত উদ্বোধন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
উনিশ শতকে বাংলাদেশে প্রকাশিত সহস্রাধিক পত্র-পত্রিকার অধিকাংশই আজ লুপ্ত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলাদেশে মুদ্রণযন্ত্রের স্থাপনা এবং 29 Jan 1789-এ
স্বামী বিবেকানন্দ প্রবর্তিত বাংলা পত্রিকা উদ্বোধন ১২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত উদ্বোধন এক অনন্য গৌরবের অধিকারী। উদ্বোধন শুধুমাত্র ধর্মীয় পত্রিকা নয়।
ঈশ্বরের কৃপায় আমি ১৯১৩ সালে প্রথম স্বামী সারদানন্দজীর সাক্ষাৎলাভ করি এবং শ্রীরামকৃষ্ণের শক্তি ও সহধর্মিণী শ্রীমা সারদাদেবীর মহিমা ও বিশালতার কথা জানতে পারি
আপনার গত ২১ জানুয়ারির কৃপাপত্র পেয়ে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের চিঠিতে মিস্টার প্যাটারসন ও আপনি যে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ।
১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে আমি প্রথমবার বেলুড় মঠে আসি। সেই সময়ই আমি শ্রীশ্রীমাকে প্রথম দর্শন করার সুযোগ লাভ করেছিলাম। সেটি ছিল স্বামী বিবেকানন্দের মহাপ্রয়াণের পর তাঁর প্রথম জন্মতিথিপূজার দিন।
১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে আমি প্রথমবার বেলুড় মঠে আসি। সেই সময়ই আমি শ্রীশ্রীমাকে প্রথম দর্শন করার সুযোগ লাভ করেছিলাম। সেটি ছিল স্বামী বিবেকানন্দের মহাপ্রয়াণের
শুধু দক্ষিণেশ্বরের দিনগুলিই নয়, আজীবন মায়ের জীবনযাপন দেখে মনে হয়, স্থিতপ্রজ্ঞার পরাকাষ্ঠা যেন তিনি। কিন্তু মনের এই অবস্থায় পৌঁছানো এত সহজসাধ্য কি? তাঁকে আমরা বহুরকমের অবাঞ্ছিত, দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছি এবং নীরবে সব সহ্য করতেও দেখেছি। এই সহনই তো অত্যন্ত কঠোর তপস্যা, যাকে শঙ্করাচার্য বলছেন ‘তিতিক্ষা’।
শুধু দক্ষিণেশ্বরের দিনগুলিই নয়, আজীবন মায়ের জীবনযাপন দেখে মনে হয়, স্থিতপ্রজ্ঞার পরাকাষ্ঠা যেন তিনি। কিন্তু মনের এই অবস্থায় পৌঁছানো এত সহজসাধ্য কি? তাঁকে আমরা বহুরকমের অবাঞ্ছিত, দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছি এবং নীরবে সব সহ্য করতেও দেখেছি।
একদিন বিরজানন্দজী সেবককে বড়ই গালাগালি দিলেন—কারণে, বিনা কারণে। সেবক একটিও প্রতিবাদ না করিয়া দীর্ঘক্ষণ ধরিয়া নীরবে ঐ গালাগাল শুনিল। পরে তখনকার মতো কার্যান্তরে যাইবার সময় কেবল বলিল : “মহারাজ, আমি ঠিক ঠিক মতো সেবা করিবার চেষ্টা করিব।”
একদিন বিরজানন্দজী সেবককে বড়ই গালাগালি দিলেন—কারণে, বিনা কারণে। সেবক একটিও প্রতিবাদ না করিয়া দীর্ঘক্ষণ ধরিয়া নীরবে ঐ গালাগাল শুনিল। পরে তখনকার মতো কার্যান্তরে যাইবার সময় কেবল বলিল : “মহারাজ, আমি ঠিক ঠিক মতো সেবা করিবার চেষ্টা করিব।”
পূজনীয় কালীকৃষ্ণ মহারাজকে [স্বামী বিরজানন্দকে] গুরুবৎ মনে হইত। যখন তাঁহাকে প্রণাম করিতাম, মনে হইত আমি আমার গুরুদেবকেই প্রণাম করিতেছি।
পূজনীয় কালীকৃষ্ণ মহারাজকে [স্বামী বিরজানন্দকে] গুরুবৎ মনে হইত। যখন তাঁহাকে প্রণাম করিতাম, মনে হইত আমি আমার গুরুদেবকেই প্রণাম করিতেছি।
স্বামী সুবোধানন্দের এই পত্রাবলী বেলুড় মঠের ‘রামকৃষ্ণ-সংগ্রহমন্দির’-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত।
(পুরানো বানান অপরিবর্তিত)
স্বামী সুবোধানন্দের এই পত্রাবলী বেলুড় মঠের ‘রামকৃষ্ণ-সংগ্রহমন্দির’-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত।
(পুরানো বানান অপরিবর্তিত)
বেশ কয়েক বছর যাবৎ পূজ্যপাদ স্বামী ভূতেশানন্দজী মহারাজের সেবা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সেই সুবাদে তাঁর সঙ্গে দেশ-বিদেশের বহু
বেশ কয়েক বছর যাবৎ পূজ্যপাদ স্বামী ভূতেশানন্দজী মহারাজের সেবা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সেই সুবাদে তাঁর সঙ্গে দেশ-বিদেশের বহু
পুরীতে মহারাজ (স্বামী ব্রহ্মানন্দজী) আমায় (স্বামী গঙ্গানন্দকে) বললেন : “কলিকালে সিদ্ধি হয় না কেন জানিস? ‘পরদানগ্রহণেন হস্তাঃ দগ্ধাঃ চক্ষুর্দগ্ধং পরস্ত্রীদর্শনেন।’”
পুরীতে মহারাজ (স্বামী ব্রহ্মানন্দজী) আমায় (স্বামী গঙ্গানন্দকে) বললেন : “কলিকালে সিদ্ধি হয় না কেন জানিস? ‘পরদানগ্রহণেন হস্তাঃ দগ্ধাঃ চক্ষুর্দগ্ধং পরস্ত্রীদর্শনেন।’”
প্রায় জনশূন্য শান্তিপুর গঙ্গাঘাটে অপরাহ্ণ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যাগর্ভে।
প্রায় জনশূন্য শান্তিপুর গঙ্গাঘাটে অপরাহ্ণ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যাগর্ভে।
বেলুড় মঠ, ১৯৫০ সাল। তখন আমি স্বামী বিরজানন্দ মহারাজের সেবক।