মেঘজটাজটিলরূপ বিচিত্র কর্মাকর্ম শরীর যেন অপ্রমেয়া মহামায়ারই বিরাট রূপ। বিচিত্র লোহিত, কৃষ্ণ, শুক্লে ত্রিগুণময়ী। তিনিই ভবজল তরঙ্গভঙ্গের অবধারিত কর্ত্রী। নেপথ্যে তিনিই অব্যক্তা মহাশক্তি—ত্রিনয়নী, নৈর্ব্যক্তিক, অমোঘ, সবের আধার। প্রচ্ছন্ন স্নেহকর আবেষ্টনে ধরে আছেন জগৎ, তাঁর অনন্ত সন্তান প্রবাহকে। জ্ঞানময়ীর জ্ঞান-নয়ন উজ্জ্বল, বিস্ফারিত। তিনিই আমার প্রাণের অম্বা হয়ে অসীম অভয় স্নেহ আশীর্বাদ নিয়ে, দেবী আর মানবীর যুগপৎ আশ্লেষে, লালপেড়ে সরল বালিকা যেন অতুল প্রেমের উজ্জ্বল মাতৃমূর্তি হয়ে আবির্ভূতা। আশিস-পুষ্পধার সদাই ঝরে পড়ছে, কৃপাহস্ত বেয়ে। দুই হাতে ঝরছে অনিবার অতুল স্নেহসম্পদ। অপর দুই করাল মুষ্টিতে ধৃত কর্মফলপাশ—আমাদেরই হস্ত মুণ্ড অঙ্গ গলিত অতীত। আমাদের অতিশয় দুঃখমার্গের নিয়ন্ত্রী। শত্রু মিত্র, ভাল মন্দ, পাপী পুণ্যবান—সবাই সঞ্চালিত এই অনতিক্রম্য মাতৃ আশিস বৰ্ত্মে। জন্মজাল কুসুমায়িত হয়ে ঘুরছে জন্মজন্মান্তরের মাতৃজঠর সমীপে। আমরা আমাদের নগণ্য দুই শিশুবাহু মেলে আকুল চেষ্টায় ভেসে চলেছি—আমাদের মায়ের কোলে অমোঘ স্নেহ-আস্বাদনের অপূরণীয় আকাঙ্ক্ষা করে। নভোমণ্ডলের সুনিয়ত অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড স্তব্ধ হয়ে অলংকৃত করছে মায়ের নিরাকারা মহিমা। সুমধুর স্নেহ-বাৎসল্যের এ অপরিমেয় সৌরভ ঝরে পড়ছে অবিরাম পুষ্পবর্ষার অর্ঘ্য হয়ে। সেই অপার অম্বাই আমাদের সবার সর্বাবস্থার গতি—সফলতায়, বিফলতায়।