প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব দেবনারায়ণ গুপ্তের উইংস-এর আড়ালে গ্রন্থখানি পড়লেই বোঝা যায়, নাট্যজগতের অন্য অনেকের মতোই তিনিও শ্রীরামকৃষ্ণ-ভক্ত, তাই প্রথমেই তাঁকে স্মরণ করেছেন—ঠাকুরের সাথে গিরিশের ছোট্ট একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে। ঘটনাটি সত্য হলেও এর মধ্যে কল্পনা আছে, লেখক সেটি স্বীকারও করেছেন। এর পরে আলোচনা যত এগিয়েছে, পাঠক সেইভাবে ঠাকুরকেও পেয়েছেন।
গ্রন্থটিতে গিরিশ-যুগ ও কিয়দংশে শিশির-যুগের কথা আলোচিত হয়েছে। গ্রন্থটি ছেষট্টিটি উপপর্যায়ে (episode) বিভক্ত। প্রতিটি পর্যায় এক-একজন নাট্যব্যক্তিত্বের পাদপীঠের আড়ালে কোনো এক স্মরণীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে—কোনোটি মহৎ, কোনোটি করুণ, কোনোটি আবার হাস্যরসে পূর্ণ। গিরিশ ঘোষ, অমরেন্দ্রনাথ দত্ত, তুলসী চক্রবর্তী, শরৎ চট্টোপাধ্যায়, দানীবাবু, শিশির ভাদুড়ি, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ দিকপালদের নিয়ে আলোচনাগুলি সুপাঠ্য এবং অনেক অজানা তথ্যে ভরপুর। আলোচনায় লেখক সেকালের অভিনেত্রীগণ যেমন—বিনোদিনী, প্রভাদেবী, তারাসুন্দরী, আশাদেবী, হরিসুন্দরী প্রমুখের কথা বাদ দেননি। তাঁদের জীবনই ছিল বেশি করুণ। আমরা অনেকেই জানি না, প্রভাদেবী সুন্দর কবিতা (গান) লিখতেন। কেউ কেউ নাটকও লিখেছেন।
আলোচিত হয়েছেন অপরেশচন্দ্র, নির্মলেন্দু লাহিড়ি, অর্ধেন্দুশেখর, এমনকী ছবি বিশ্বাস, জহর গাঙ্গুলিও। একটি নতুন তথ্য পাওয়া যাবে এই গ্রন্থ থেকে—গঙ্গাধর গঙ্গোপাধ্যায় (স্বামী অখণ্ডানন্দজী) গিরিশ-পুত্র দানীবাবুর সঙ্গে একবার অ্যামেচার থিয়েটারে ‘লক্ষ্মণ বর্জন’ নাটকে অভিনয় করেন; রাম—গঙ্গাধর, লক্ষ্মণ—দানীবাবু। পাঠকেরা এই বই পড়ে অপার আনন্দ পাবেন, সন্দেহ নেই।