২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের শি‌ক্ষার জন্য ঝাড়গ্রামে একটি আবাসিক কো-এডুকেশন স্কুলের সূচনা করে, যেটির নাম ‘একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি এক চুক্তি অনুসারে রামকৃষ্ণ মিশন এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা এবং প্রশাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। তখন তার নামকরণ হয়—‘রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির (EMRS)’। ২০১৭ সালের ২০ অগস্ট এই কেন্দ্রটি বেলুড় মঠের একটি শাখাকেন্দ্ররূপে স্বীকৃতিলাভ করে, নাম হয়—‘রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, ঝাড়গ্রাম’।

৯৯ বছরের এক লিজ চুক্তিতে প্রাপ্ত প্রায় ৫ একর জমির ওপর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির অবস্থিত। পরবর্তিকালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্তমান জমি-সংলগ্ন আরো ৫ একর জমি দীর্ঘকালীন লিজ চুক্তিতে বিদ্যামন্দিরকে দান করে প্রধানত তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের শি‌ক্ষাগত উন্নয়নের জন্য এবং রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যান্য সার্বিক সেবাকাজ পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে। ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর এই আশ্রমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই বিদ্যালয়ে শি‌ক্ষার মাধ্যম ইংরেজি এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাত প্রায় সমান। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই শি‌ক্ষালাভের ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের প্রথম প্রজন্মস্বরূপ। ২০১৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশন এটি অধিগ্রহণ করার পর থেকেই বিদ্যালয়ের ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে। বিদ্যালয়ে এবং ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি নতুন তলের সংযোজন হয়। পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি নির্মিত হয়। শুরু হয় কম্পিউটার প্রশি‌ক্ষণকেন্দ্র, সংগীত, স্পোকেন ইংলিশ প্রভৃতির শি‌ক্ষাদান। চেষ্টা চলছে রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত অন্য বিদ্যালয়গুলির উন্নত মানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন করার।

বর্তমানে এখানে কোনো প্রথাগত মন্দির না থাকলেও স্থাপিত হয়েছে একটি সম্মেলন তথা প্রার্থনাক‌ক্ষ। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর সেটির উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী স্মরণানন্দজী মহারাজ।

প্রাথমকিভাবে সাধুদের বিদ্যালয়-চত্বর থেকে প্রায় ২ কিমি দূরত্বে বান্ধারভোলাতে একটি সরকারি অতিথিনিবাসে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। ২০২১ সালের ১২ জুলাই এখানকার নবনির্মিত সাধুনিবাসের দ্বারোদ্ঘাটন করেন স্বামী বিমলাত্মানন্দজী মহারাজ। আরো কিছু অংশ সংযোজনের পর সেটির উদ্বোধন করেন স্বামী লোকোত্তরানন্দ ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল।

বর্তমানে এই বিদ্যালয় ছাড়াও এখানে চলছে একটি নিঃশুল্ক কোচিং সেন্টার, নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প; উদ্‌যাপিত হচ্ছে ঠাকুর, মা, স্বামীজীর জন্মতিথি-উৎসব।

স্বামীজী এক পত্রে লিখছেন : “যদি পর্বত মহম্মদের নিকট না-ই আসে, তবে মহম্মদকেই পর্বতের নিকট যাইতে হইবে।” তাঁর সেই অমোঘ বার্তার সার্থক রূপায়ণ আজ প্রতীয়মান হয়ে উঠছে ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের কর্মপ্রবাহের মাধ্যমে।