দ্বিপ্রহরের খর রৌদ্রে চারিপাশ যেন তৃষ্ণার্ত, পথঘাট প্রায় জনমানবশূন্য, বৃক্ষতলে ছায়াও আজ যেন বড়ই কৃপণ। বৈশাখ মাসে ভারতবর্ষের এই উত্তরপ্রদেশ অঞ্চল প্রকৃতপক্ষেই অস্থিচর্মসার বৃদ্ধ মানুষের মুখমণ্ডলের মতো রুক্ষ, শুষ্ক হইয়া ওঠে। জনহীন পথে এক বালক ক্ষুধার তাড়নায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরিয়া মরিতেছে, বয়স আন্দাজ সাত কী আট বৎসর হইবে, কিন্তু এই দ্বিপ্রহরে গৃহস্থ বাড়ির কপাট বন্ধ, মানুষজন বিশ্রামে মগ্ন, ডাকিলেও কেহ সাড়া দিতে চাহে না। বালক বন্ধ দুয়ারে কাতর স্বরে কহিতেছে : “মাই, ভুক লাগৎ মাই!”
হতভাগ্য বালকের নাম রামবোলা, ইহজগতে তাহার কেহই নাই, জন্মের কিছু বৎসর পরেই পিতা-মাতার মৃত্যু হইতেই পথ তাহার চিরসঙ্গী হইয়া উঠিয়াছে। ভাগ্য সহায় হইলে কোনোদিন দুমুঠি অন্ন জুটিয়া যায়, নচেৎ উপবাস।
রামবোলার জন্ম হইয়াছিল শুক্লা সপ্তমী তিথিতে বান্ধা জেলার রাজাপুর গ্রামে। পিতা আত্মারাম দুবে সৎ নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ, মাতা হুলসী দেবীও দেব-দ্বিজে ভক্তিপরায়ণা। কিন্তু অদৃষ্ট তাঁহাদের কপালে সন্তানসুখ লিখিয়া দেয় নাই। সদ্যজাত শিশুর মুখে জন্মমুহূর্তে শ্রীরাম নাম শুনিয়া আত্মারাম বড় আশা করিয়া পুত্রের নাম রাখিয়াছিলেন রামবোলা। হায়! তখন কী জানিতেন এই অনিন্দ্যকান্তি কোমলমুখ সন্তানকে নিয়তির পরিহাসে একদিন পথে পথে কঠোর রৌদ্রে ভিক্ষা করিতে হইবে!
রামবোলা আর পারিতেছে না, ক্ষুধা সে সহ্য করিতে পারে কিন্তু আজ পিপাসায় তাহার জিভ শুকনো বালুর মতো হইয়া গিয়াছে, চারিপাশ ঝাপসা, মাথার উপরেই প্রখর সূর্য যেন নামিয়া আসিয়াছে! এ কী হইতেছে, অদূরে গৃহটিকে দুইখানি কেন দেখিতেছে? জগৎ টলমল, পায়ের নিচে মাটি দুলিতেছে, কয়েক মুহূর্ত এইরূপ দেখিয়া ক্লান্ত বালক পথের উপরেই সংজ্ঞা হারাইয়া লুটিয়া পড়িল, পড়িবার মুহূর্তে তন্দ্রাচ্ছন্ন রামবোলার মুখ হইতে অস্ফুটে শুধু একটি শব্দই বাহির হইল—‘হা রাম!’
বর্ষার সতেজ তৃণরাজির মতো কোমল মুখখানি এখন আরক্তিম, পথের ধুলা সর্বাঙ্গে, হঠাৎ পড়িয়া যাওয়ায় পাথরে আঘাত লাগিয়া কপালের এককোণ হইতে উষ্ণ রক্তধারা গড়াইয়া ধুলাপথ ভিজিয়া তুলিয়াছে।
সহসা কোথা হইতে এক বালক আসিয়া রামবোলার কপালের ক্ষতে হাত বুলাইয়া অতি মধুর স্বরে কহিল : “রামবোলা, রামবোলা! তোমার তৃষ্ণা পাইয়াছে?” রামবোলা চোখ মেলিয়া দেখিল কে এক অপরিচিত বালক মাথার পাশে বসিয়া রহিয়াছে, বয়সে তাহার তুলনায় ছোটই হইবে! বালকের কী রূপ! একখানি জরি-চুমকি বসানো ধুতি পরিয়াছে, মাথায় ক্ষুদ্র উষ্ণীষ, মুখখানি যেন ননি দিয়া তৈরি! আর তাহার চোখদুটি, আহা, কাকচক্ষু সরোবরে দুইখানি গাঢ় নীলবর্ণ পদ্ম বুঝি ফুটিয়াছে যেন! রামবোলা ক্ষীণকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল : “তুমি কে? কোথা হইতে এমন রাজবেশে আসিলে?”
বালক সদ্যপ্রস্ফুটিত চাঁপাফুলের মতো আঙুলগুলি রামবোলার দিকে বাড়াইয়া দিয়া কহিল : “আইস!”—“কোথায় যাইব?”—“আমার বাড়ি যাইবে, সেখানে আমরা কেমন খেলিব, গান করিব, মা অন্ন প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছে! আইস!”
নিদ্রাচ্ছন্ন মানুষের মতো রামবোলা উঠিয়া দাঁড়াইল। সামনে বালক যাইতেছে, আহা! কী সুন্দর তাহার ভঙ্গিমা! ঠমক-ঠমক ছন্দে হাঁটিতেছে, অভিভূত স্বরে রামবোলা শুধাইল : “তোমার নাম বলিলে না তো! তোমার নাম কী গো?” বালক মুখ ঘুরাইয়া ফিক করিয়া হাসিয়া কহিল : “রামলালা!”
ঈশ্বরকৃপায় রামবোলার এই ভিক্ষার জীবন অচিরেই সমাপ্ত হইল; নৃসিংহদাস—এক রামাইত সাধুর আশ্রমে বালকের আশ্রয় জুটিল। রামনামের প্রতি রামবোলার অনুরাগ দেখিয়া তিনি তাহাকে রামকথা শুনাইবার সহিত নানাবিধ শাস্ত্রপাঠও করাইলেন। উপযুক্ত বয়সে উপনয়ন ও দীক্ষা সমাপনান্তে তাহার নতুন নাম হইল ‘তুলসীদাস’। সন্ন্যাসী কহিলেন : “তুমি অধ্যাপনার উপযুক্ত হইয়াছ, তবে আমার ইচ্ছা কাশীক্ষেত্র যাইয়া তুমি আরো শাস্ত্রাদি পাঠ করিবে।” তুলসীদাস বিনম্র স্বরে কহিল : “তাহাই হইবে গুরুদেব, আপনার ইচ্ছাই পূর্ণ হইবে।”
কাশী যাইবার পূর্বে স্থানীয় সম্পন্ন ব্রাহ্মণ দীনবন্ধু পাঠকের কন্যা রত্নাবলীর সহিত তুলসীর বিবাহ হইল। বিবাহের পর নিকটস্থ গ্রামে নবদম্পতি বসবাস করিতে শুরু করিলেন।
বড় সুখের দিন ছিল, আষাঢ় মাস আসিয়াছে, গৃহের অদূরে নদীর উপর আকাশ ভাঙিয়া মেঘ জমিয়াছে আজ, আঙিনায় মিষ্ট ফুলের সুবাসে বিভোর তুলসী কৃষ্ণছায়াসজল চরাচরের পানে চাহিয়া ভাবিতেছে—জগতে প্রেমের তুল্য মহৎ ভাব আর কিছুই নাই। হায়! মানুষ যাহা ভাবিয়া লয় বাস্তব জগতে তাহার কিছুমাত্র ফলবতী হইতে পারে না! যুবক তুলসীর নূতন সংসার দেখিয়া সম্ভবত অলক্ষ্যে অঘটনঘটনপটীয়সী মৃদু হাসিয়াছিলেন—যাহাকে তিনি ঘর ভাঙিয়া বাহিরপথে লইয়া যাইবেন, যাহাকে অতল ভাবসাগরের প্রেমে ভাসাইয়া দিবেন, তাহার কি ক্ষুদ্র সংসারে নিতান্ত সাধারণ গৃহীর ন্যায় সুখভোগ মানায়? মহামায়ার বিচিত্র ইচ্ছায় তাহাই হইল!
কয়েক মাস পর রত্নার পিতৃগৃহ হইতে লোক আসিল তাহাকে লইয়া যাইবার জন্য, দীনবন্ধু কন্যার অদর্শনে নাকি খুবই কাতর হইয়া পড়িয়াছেন। তুলসীর ইচ্ছা না থাকিলেও মত দিতে বাধ্য হইল, কিন্তু রত্না পালকি করিয়া গৃহ হইতে সামান্য পথ যাইতেই শূন্যগৃহে অস্থির হইয়া উঠিল। এই গৃহ, আঙিনায় ফুলের গাছ, গৃহস্থালি সবই রহিয়াছে কিন্তু জগৎ যে শূন্য! সকল আনন্দ, রূপ লইয়া গৃহলক্ষ্মী চলিয়া গিয়াছেন, এখন এই নিরাভরণ গৃহে তুলসী কী লইয়া বাঁচিবে! ছুটিয়া যাইল, পালকি বেশি দূর যায় নাই, কাছে গিয়া কাতর স্বরে তুলসী কহিল : “রত্না, নামিয়া আইস! ফিরিয়া চল, তোমাকে ছাড়িয়া আমি কিছুতেই থাকিতে পারিব না।” বাহিরের লোকের সামনে এইরূপ অনুরাগের কথায় রত্না যথেষ্ট লজ্জিত হইল—ছি ছি, এ তিনি কী করিতেছেন!
বারংবার তুলসী একই কথা বলিয়া যাইতে লাগিল, উপায়ান্তর না দেখিয়া পালকির পরদা সরাইয়া মৃদু তিরস্কারের সুরে রত্না স্বামীকে কহিল : “লাজ না লাগৎ আপুকো, ধৌরে আয়হু সাথ! ধিক ধিক আয়সো প্রেমকো, কহা কহৌ মৈ নাথ। অস্থিচর্মময় দেহ মম, তামো জৈসি প্রীতি, তৈসী যো শ্রীরাম মহ, হত না তত্ত্ব ভবভীতি।”
স্ত্রীর মুখে এই কথা শুনিয়া স্তম্ভিত হইল তুলসী। ছি ছি, সত্যই সে তাহার প্রাণের রামলালাকে ভুলিয়া রহিয়াছে! ধিক! রত্না তো ঠিকই কহিয়াছে—এই অনিত্য শরীরের প্রেমের পরিবর্তে যদি শ্রীরামে মন অর্পণ করিত, তাহা হইলে এই বিলাপের স্থলে হৃদয় অসীম আনন্দে ভরিয়া উঠিত! কী অচিন্তনীয় লীলা প্রভুর, কাহার মুখ দিয়া তিনি কোন কর্তব্য যে স্মরণ করাইয়া দিয়া থাকেন তাহা সাধারণ মানুষের বুদ্ধির অতীত! তুলসীকে পথমাঝে রাখিয়া রত্নাকে লইয়া পালকি দূর পথে নাহুম নাহুম ধ্বনি তুলিয়া মিলাইয়া যাইল। নিজেকে ফিরিয়া পাইল তুলসী, ফিরিয়া পাইল তাহার রামলালাকে! গৃহে আসিয়া তুলসী বারাণসীর পথে রওয়ানা হইল।
দুই
বারাণসী আসিয়া আশ্রয় পাইতে তুলসীকে বিশেষ বেগ পাইতে হয় নাই। প্রখ্যাত শাস্ত্রবিদ সনাতনদাস এই ত্যাগী, মেধাবী যুবককে চিনিতে পারিয়াছিলেন, তিনি সস্নেহে তুলসীকে আশ্রমে স্থান দিয়াছেন এবং অচিরেই নিষ্ঠাবান যুবক তাঁহার প্রিয়পাত্র হইয়া উঠিয়াছে। দিন নিজ নিয়মে কাটিতেছে; শাস্ত্রাদি পাঠ, আশ্রমের নিত্যকর্ম, ইষ্টদেব রঘুনাথজীর পূজা, নামগান সবই সুচারুরূপে হইতেছে কিন্তু তুলসীর মন চঞ্চল, কখনো বা বিমর্ষ, দিবারাত্র তাহার মনে একটি প্রশ্নই গুঞ্জন তুলিতেছে—রামলালা কি আসিবেন না? গৃহ, সংসার ত্যাগ করিয়া এতদূর আসা কি তাহা হইলে বৃথা যাইবে?
আজকাল সনাতনদাসের আশ্রমে পূর্বের নির্জনতাও আর নাই, নানা দেশ হইতে বিদ্যার্থীর ঢল নামিয়াছে, সমস্ত দিন তরুণ মেধাবী যুবক দলের শাস্ত্র আলোচনায় কাটিয়া যায়, উহাতে তুলসীর মন আরো বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়ে। কী হইবে শুষ্ক শাস্ত্রালোচনায়? সে তো পণ্ডিত হইতে এখানে আসে নাই! রামলালার অদর্শনে জীবন কাটাইয়া কী লাভ? উপায়ান্তর না দেখিয়া তুলসী আশ্রম ত্যাগ করিয়া নগরীর উপান্তে নির্জন বনস্থলে চলিয়া আসিল, অরণ্যের প্রান্তিক কুটিরেই তাহার দিন কাটিতে লাগিল। সামান্য আহারাদি ব্যতিরেকে সমস্ত দিন তুলসীর রামলালার চিন্তা ও ধ্যানে কাটিয়া যায়, কিন্তু হৃদয়ে আলোর চিহ্ন নাই! কোথা যাইলে, কী করিলে প্রভুর দর্শন মিলিবে—এই ব্যাকুল চিন্তায় তাহার মন দিবারাত্র ডুবিয়া থাকে।
এমতাবস্থায় একদিন এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটিল। কুটিরের অদূরে একটি জংলা ঝোপের নিকট তুলসী প্রত্যহ শৌচাদি করিয়া ঘটির অবশিষ্ট জল পাশে বেলগাছের গোড়ায় ঢালিয়া দিত। গাছটিতে বহু বৎসর ধরিয়া এক প্রেতের বাস, তুলসীর জল সূক্ষ্মরূপে পান করিয়া তাহার পিপাসা মিটিত। মাসাধিক কাল এইরূপ চলিবার পর এক রাত্রে প্রেত বায়ুশরীরে তুলসীকে দেখা দিয়া প্রসন্ন কণ্ঠে বলিল : “তোমার জল প্রত্যহ আমার পিপাসা মিটাইয়া থাকে, ইহাতে আমি অত্যন্ত প্রসন্ন হইয়াছি। কীরূপে তোমার উপকার করিতে পারি?” তুলসী প্রণাম জানাইয়া কহিল : “আপনি যদি সত্যই প্রসন্ন হইয়া থাকেন, তাহা হইলে ইষ্টলাভের বর প্রদান করিলে আমি কৃতার্থ হইব।” প্রেত বর প্রদান করিয়া বলিল : “কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটের নিকট প্রত্যহ সন্ধ্যায় রামগান হইয়া থাকে, ঐস্থলে যাইলে তোমার ইষ্টলাভের পথ সুগম হইবে!” কথাকয়টি বলিয়া প্রেতশরীর হারাইয়া যাইল।
প্রেতের কথা মিথ্যা হয় নাই। সেই স্থলে যাইয়া তুলসী ঘাটের রূপ দেখিয়া মুগ্ধ হইল। নির্জন সন্ধ্যায় সুরধুনীর ছলছল স্রোতোধ্বনির মাঝে পুরাতন এক ঘাটে বসিয়া একজন প্রৌঢ় রামগান গাহিতেছেন, লোকজন খুব বেশি নাই। অদূরে এক বৃদ্ধ চক্ষু বুজিয়া হাতজোড় করিয়া বসিয়া রহিয়াছেন, তাঁহার মুখ দেখিয়া ক্ষণিকের জন্য তুলসীর মনে হইল—এই অপরিচিত বৃদ্ধ রামগানে যেন নিজেকে ভাসাইয়া দিয়াছেন! গতরাত্রে প্রেতের কথা স্মরণ করিয়া তুলসীর সর্বাঙ্গ শিহরিত হইল! প্রেত এই বৃদ্ধের কথা উল্লেখ করিয়া বলিয়াছিল : “বৃদ্ধ সাধারণ কোনো মানুষ নহে। তিনি রঘুবীরের দূত, পরমপ্রিয় ভক্তশ্রেষ্ঠ মারুতি!” তুলসী সাশ্রুনয়নে ভাবিল, নররূপ ধারণ করিয়া পবননন্দনের নিত্যলীলা তাহা হইলে আজও চলিতেছে?
বীর পবনপুত্রের কৃপা তুলসী সত্যই পাইয়াছিল, সেই অপরূপ সন্ধ্যায় আকুল ভক্তের কান্না শুনিয়া তিনি তাহাকে বর প্রদান করিয়া বলিয়াছিলেন : “নিরন্তর প্রভুর নাম স্মরণ করিলে তিনি নিশ্চয় আসিবেন!” সত্যই তিনি ভক্তবৎসল, প্রকৃত ভক্তের আকুলতা তাঁহাকে বারবার ধুলার জগতে টানিয়া লইয়া আসে। তুলসীও নিরন্তর সাধনার শেষে রঘুবীর, তাহার প্রিয় রামলালার দর্শন পাইয়াছিল। কালক্রমে রঘুবীরের নিত্যদর্শন তুলসীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হইয়া যায়।
ইহার পরেই ভক্তপ্রবর তুলসীদাসের দিব্য জীবন শুরু হইবে, ১৬৩১ সালে অযোধ্যা বসবাসকালে স্বয়ং রুদ্রের নির্দেশে সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে স্থানীয় আওয়াধি ভাষায় তিনি লিখিতে শুরু করিলেন সেই মহাগ্রন্থ—রামচরিতমানস। “সম্বৎ সলোহৌল ইবতৈসা, করৌ কথা হরিপদ ধরি সীমা/ নৌমী ভোমবার মধুমাস, অবহ পুরয়াহ চরিত প্রকাশা।” এই মহাগ্রন্থ উত্তরকালে সমগ্র ভারতভূমির নয়নের মণি হইয়া উঠিয়াছে এবং মর্যাদাপুরুষোত্তম শ্রীরাম সকল মানুষের হৃদয়ের অন্তস্তলে মূর্ত হইয়া উঠিয়াছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ কহিয়াছিলেন, সরল হইলে ঈশ্বরলাভ হয়। প্রকৃতার্থেই তুলসীদাসের সারল্য ও অকৃত্রিম আন্তরিক প্রেমাভক্তিই তাঁহাকে রামলালার আপনজন করিয়া তুলিয়াছিল।
ইহাই ভারতবর্ষের সহস্র বৎসরের পুরাতন আদর্শ। দিনান্তে কঠোর পরিশ্রমের শেষে যে দেহাতি কৃষক মৃদু লণ্ঠন জ্বালাইয়া কুটিরের উঠানে বসিয়া দুলিয়া দুলিয়া সুর করিয়া পড়িতেছে : “লছিমন অরু সীতা সহিত প্রভুহি বিলোকতি গাতু,/ পরমানংদ মগন মন পুনি পুনি পুলকিত গাতু!”—তাহার হৃদয়েই রামলালার সিংহাসন পাতা রহিয়াছে। উহাই শ্রীরামচন্দ্রের প্রকৃত জন্মভূমি।
‘স্বামী কৈলাসানন্দ স্মারক রচনা’রূপে এটি প্রকাশিত হলো।