শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত-এর একটি অসামান্য দৃশ্য : ১৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮৪, ভাদ্র কৃষ্ণা দশমী তিথি। আগের দিনই দেবীর পূজার প্রথম কল্পের সূচনা হয়েছে। মহালয়া এখনো পাঁচদিন বাকি। শরৎকাল। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবু ডুবু। দক্ষিণেশ্বরে তাঁর ঘরের পশ্চিমের গোল বারান্দাকে পিছনে রেখে গঙ্গার বাঁধানো পোস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ। সমাধিস্থ। সঙ্গে শ্রীম। সামনে উত্তরবাহিনী গঙ্গা—জোয়ার এসেছে। পিছনে ফুলের বাগান, ডানদিকে নহবত ও পঞ্চবটী।

একটু আগেই হাজরা মহাশয় এসে শ্রীরামকৃষ্ণকে জানিয়েছেন : “নরেন্দ্র আগমনী গাইলে।” শ্রীরামকৃষ্ণ ব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলেন : “কিরকম?” তারপর গেরুয়া রঙে ছোপানো একটি জামা পরতে পরতে নরেন্দ্রকে বলছেন : “তুই আগমনী গেয়েছিস?” গান শুনতে শ্রীরামকৃষ্ণ গোল বারান্দা থেকে নেমে নরেন্দ্রের সঙ্গে গঙ্গার পোস্তার ওপর এলেন। কাছে দাঁড়িয়ে গান গাইছেন নরেন্দ্র—

“কেমন করে পরের ঘরে, ছিলি উমা বল মা তাই।
কত লোকে কত বলে, শুনে প্রাণে মরে যাই॥”

মা দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার আগমনি গান এটি—আজও বেলুড় মঠে দুর্গাপূজার প্রাক্কালে গাওয়া হয়।

কলকাতার ছেলে স্বামী বিবেকানন্দ। আশৈশব বহু বনেদি বাড়ির দুর্গোৎসব দেখেছেন। দুর্গাপূজা সম্বন্ধে যে তাঁর সম্যক ধারণা ছিল, তা তাঁর লেখায় জানতে পারি—দেবীর মৃত্তিকাস্নানের উপকরণের উল্লেখ করেছেন।তাঁর লেখায় পটুয়াদের চালচিত্রকে বা ‘দুর্গাঠাকুরের চালচিত্রি’কে তিনি রবিবর্মা অথবা পাশ্চাত্য অনুকরণের আর্টের চেয়ে ঢের ভাল বলেছেন।

স্বামীজীর দেখা কলকাতার বনেদি বাড়ির দুর্গাপূজা কেমন হতো তার আভাস পাওয়া যায় মহেন্দ্রনাথ দত্তের বর্ণনায়—“আমরা শৈশবে দেখেছি যে কলিকাতায় অনেক বাটীতে দুর্গাপূজা হইত। শাক্তের বাটীতে দুর্গার সিংহ সাধারণভাবে এবং গেঁাসাই-এর বাড়ীতে সিংহ ঘোড়ার মত মুখ হইত।… প্রতিমার আয়তন এক এক বংশে এক এক প্রকার আছে। বড়বাজারের এক বাড়ীর প্রতিমা সর্বাপেক্ষা ছোট হইত। তাহাকে আমরা পুতুল দুর্গা বলিতাম। আমরা যখন শিশু, তখন ডাকের গহনা উঠে নাই, মাটির গহনা হইত।… দুর্গাপূজায় বেশ একটা ভক্তির ভাব ছিল। বিল্ববরণ রাত্রে হইত। নব পত্রিকার স্নান হইতে শুরু করিয়া খুব একটা আনন্দ স্রোত বহিত। সন্ধিপূজায় দীপমালা হইত এবং অনেক স্ত্রীলোক হাতে বা মাথায় সরা করিয়া ধুনা পুড়াইত। সে-সব মানসিক ব্রতের ভিতর ছিল। অনেকে সন্ধি পূজার সময় নাপিত দিয়া বুক চিরিয়া রক্ত সোনার বা রূপার বাটি করিয়া পূজা দিত। তবে এটা খুব কম ছিল। কলিকাতায় শহরে অনেক বাটীতে বলি ছিল না। শাক্ত হইলেও বংশপরম্পরায় বলি নিষেধ ছিল। কোন কোন বাটীতে বলি হইত। বিশেষ আমোদের ছিল নীল মাখান কোরা কাপড় পরে ঢুলীদের বাজনার সঙ্গে ছেলেদের নাচা।… ‘কাঁইনানা, কাঁইনানা, গিজদা গিজোর, গিজোড় গিজোড়’—আর ছোট ছেলেরা দু’পাছা চাপড়াইয়া নাচিত। তারপর ঢুলীদের আর একটা বোল ছিল—‘দাদাগো দিদিগো গাবতলাতে গরু দেখসে; গরু গরু গরু গরু তার দেখব কি আর।’ তখনকার দিনে দুর্গাপূজা হ’লে দশজনকে পাত পাড়াতে হ’ত।… যাহোক দুর্গাপূজার সময় সকলকে মিষ্টি মুখ করান হ’ত।…

“বিজয়ার দিন নারিকেলছাবা দেওয়া হইত। বিজয়ার কোলাকুলিতে সন্দেশ বা অন্য কোন খাবার চলিত না।… বিজয়ার রাত্রে পরস্পরের বিরোধ ভুলিয়া কোলাকুলি করিতে হইত।… যাহাদের বাড়ীতে প্রতিমা না আসিত, তাহারা কয়েকদিন চণ্ডীপাঠ করাইতেন। এইটা ছিল তখনকার দিনের জাতীয় উৎসব।”

এছাড়াও নরেন্দ্রনাথ শারদীয়া মহাপূজার দিনগুলিতে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গ করেছেন, তাঁকে বিশেষ বিশেষ ক্ষণগুলিতে দেখেছেন ভাবসমাহিত। কথামৃত সূত্রে জানা যায় যে, ১৮৮৩ সালে অধর সেনের বাড়ির দুর্গাপূজায় ভক্তসঙ্গে ভাবসমাহিত শ্রীরামকৃষ্ণ মাতৃসংগীতে মাতোয়ারা করেছিলেন। সম্ভবত সেই গোষ্ঠীতেও ছিলেন নরেন্দ্রনাথ। আবার ১৮৮৪ সালের দুর্গাপূজায় অধর সেনের বাড়িতে ও দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গ করেছেন নরেন্দ্রনাথ। মহাষ্টমীতে বা মহানবমীতে শ্রীরামকৃষ্ণের বিশেষ উদ্দীপন দেখেছেন, গান গেয়েছেন। আবার বিজয়ায় দক্ষিণেশ্বরে আনন্দোৎসবে মেতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণের অসুস্থতা সত্ত্বেও ১৮৮৫ সালের দুর্গাপূজা উপলক্ষে শ্যামপুকুরবাটীতে যে আনন্দোৎসব বয়ে গিয়েছিল, তার সামান্য আভাস পাওয়া যায় শ্রীমর লেখনীতে—“৺শারদীয় পূজা-মহোৎসবে কলিকাতা নগরীর আবালবৃদ্ধবনিতা প্রতি বৎসর যেমন মাতিয়া থাকে, সেইরূপ মাতিয়াছে। সে আনন্দের প্রবাহ ঠাকুরের ভক্তদিগের প্রাণে বিশেষরূপে অনুভূত হইলেও উহার বাহ্যপ্রকাশের পথে বিশেষ বাধা উপস্থিত হইয়াছে। কারণ, যাঁহাকে লইয়া তাহাদের আনন্দোল্লাস তাঁহার শরীরই এখন অসুস্থ—ঠাকুর গলরোগে আক্রান্ত।… গৃহস্থ ভক্তেরা সকাল সন্ধ্যা ঐ বাটীতে আগমনপূর্বক সকল বিষয়ের তত্ত্বাবধান ও বন্দোবস্ত করিতেছে এবং যুবক-ছাত্র ভক্তদলের ভিতর অনেকে নিজ নিজ বাটীতে আহারাদি করিতে যাওয়া ভিন্ন অন্যসময়ে ঠাকুরের সেবায় লাগিয়া রহিয়াছে; আবশ্যক বুঝিয়া কেহ কেহ তাহাও করিতে না যাইয়া চব্বিশঘণ্টা এখানেই কাটাইতেছে।”

এবারই নরেন্দ্রনাথ দেখেন দুর্গাপূজার বিশেষ ক্ষণগুলিতে শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবসমাহিত রূপ। মহাপূজার এক বিশেষ মুহূর্তে শ্রীরামকৃষ্ণ জ্যোতির্ময় পথে ভক্ত সুরেন্দ্রের বাড়িতে দুর্গাপূজায় উপস্থিত হয়েছেন বলে তাঁর দর্শন হলো। তাঁর দর্শনের সত্যতারও প্রমাণ পেয়েছিলেন ভক্তেরা। সেদিনই শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতিনিধিরূপে অন্য ভক্তদের সঙ্গে সুরেন্দ্রনাথের বাড়িতে বিগ্রহদর্শন ও প্রসাদগ্রহণ করতে যান নরেন্দ্রনাথ। আবার সন্ধিপূজার সময় সমাধিস্থ শ্রীরামকৃষ্ণের শ্রীচরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন।

সেবার ১৮ অক্টোবরে পড়েছিল বিজয়া দশমী। সকলের সঙ্গে নরেন্দ্রনাথও শ্রীরামকৃষ্ণকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে অন্যদের সঙ্গে কোলাকুলি করায় মেতেছিলেন। শ্রীমর বর্ণনা —“ভক্তেরা সকলে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করিয়া তাঁহার পদধূলি গ্রহণ করিলেন। তৎপরে পরস্পর কোলাকুলি করিতে লাগিলেন। আনন্দের সীমা নাই। ঠাকুরের অত অসুখ, সব ভুলাইয়া দিয়াছেন! প্রেমালিঙ্গন ও মিষ্টমুখ অনেকক্ষণ ধরিয়া হইতেছে।”সুতরাং দুর্গাপূজা স্বামীজীর অপরিচিত তো নয়ই, বরং বড় প্রাণের জিনিস।

শ্রীরামকৃষ্ণের স্থূলশরীর ত্যাগের পর বরানগর মঠ প্রতিষ্ঠা হলে তার অবিসংবাদিত নেতা হলেন স্বামীজী। সেই বরানগর মঠেও শুরুর দিনগুলি থেকে ঘটে-পটে দুর্গাপূজার প্রচলন হয়েছিল। কোনো কোনো বছর তপস্বী স্বামী তুরীয়ানন্দজী নবরাত্রিব্যাপী চণ্ডীপাঠ করতেন।৮ ১৮৮৭ ও ১৮৮৯ সালে স্বামীজী বরানগর মঠেই দুর্গাপূজা কাটান। মাঝে ১৮৮৮ সালে ঐ সময়ে তিনি হাতরাসে অবস্থান করছিলেন।

১৮৯০ সালে স্বামীজী বেরিয়ে পড়েন প্রব্রজ্যায়। সেবছর ২০ অক্টোবর ছিল দুর্গাপূজার সপ্তমী। তাঁর দুর্গাপূজার সময়টা (২০—২৩ অক্টোবর) কাটে হরপার্বতীর লীলাস্থল উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে।১০ সঙ্গে ছিলেন অসুস্থ স্বামী অখণ্ডানন্দজী, তপস্যারত স্বামী তুরীয়ানন্দজী, স্বামী সারদানন্দজী ও বৈকুণ্ঠনাথ সান্যাল।

পরের বছর নবরাত্রির সময় স্বামীজী খেতড়িতে। ৪ অক্টোবর ১৮৯১, আশ্বিন শুক্লা দ্বিতীয়ার দিনে স্বামীজী খেতড়িরাজ অজিত সিং-এর সঙ্গে ঘোড়ায় করে চললেন নিকটবর্তী সিকর রাজ্যে প্রসিদ্ধ দেবী জীন মাতার দর্শনে।১১ ৬ অক্টোবর মঙ্গলবার, স্বামীজী ও অজিত সিং সিকরে পৌঁছে সেখানকার রাও রাজা মাধো সিং-এর সঙ্গে দেবী জীন মাতাকে দর্শন করেন। সেদিন শুক্লা চতুর্থী। জীন মাতাকে দর্শন করে স্বামীজী অভিভূত হয়ে দেবী ও তাঁর মন্দির সম্বন্ধে জানতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বাস্তবে, ‘জীন’ শব্দটি ‘জয়ন্তী’র অপভ্রংশ। দেবীর আসল নাম ‘জয়ন্তী মাতা’—অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী। জনশ্রুতি, এখানে পাণ্ডবরা জয়ন্তী দেবীর আরাধনা করেছিলেন। রাজস্থানে লোকগীতির মধ্যে জীন মাতার লোকগীতি সবচেয়ে দীর্ঘ এবং মূলত নাথ সম্প্রদায়ের বা কানফাটা যোগীরা গেয়ে থাকেন। জয়পুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানের শেখাওয়াতি অঞ্চলে১২ সিকর জেলার দান্তা-রামগড় তহশিলের জীন গ্রামে জীন মাতার মন্দির, স্থানীয়রা বলে—‘হর্ষ পাহাড়ি’। আরাবল্লি পর্বতমালার এই অংশটি ‘জয়ন্তী মালা’ নামে প্রসিদ্ধ এবং শিবপুরাণে উল্লেখিত। দেবীর ভৈরব ‘হর্ষভৈরব’ নামে খ্যাত এবং জনশ্রুতি যে, তিনি দেবীর ভাই।

এই অঞ্চলটি মহাভারতোক্ত মৎস্যদেশের অন্তর্গত। প্রাচীনকালে এখানে মিনা আদিবাসীরা আধিপত্য করত এবং পরে কছবাহা রাজপুতদের অধিকারে আসে। জয়ন্তী দেবী বা জীন মাতা শেখাওয়াত, রাও, মীনা, জীনগর জাঠ প্রভৃতি বংশের কুলদেবী। দেবীর পূজারিরা পরাশর ব্রাহ্মণ। তাঁদের সঙ্গে সামরিয়া নামক খাপের এক চৌহান ক্ষত্রিয়ও দেবীকে নিবেদিত বস্তুর অংশীদার।

দেবীর মন্দিরটি বহু প্রাচীন—প্রতিহার ও চৌহান স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি, স্তম্ভনির্মাণে এর বিশেষত্ব চোখে পড়ে। মন্দিরের স্তম্ভে ও অন্যান্য জায়গায় শিলালিপি দেখে অনুমান করা যায় যে, মন্দিরটি সম্ভবত দশম শতাব্দীর মধ্যেই নির্মিত। কেউ কেউ বলেন, দিল্লি-অধিপতি পৃথ্বীরাজ চৌহান এই মন্দিরটি তৈরি করিয়ে দেন। দুটি নবরাত্রি ছাড়াও শরৎ পূর্ণিমাতে দেবীর মন্দিরে এবং ফাল্গুন মাসে ভৈরবের মন্দিরে মেলা বসে।
দেবীর সম্বন্ধে বহু অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত। কথিত আছে, ঔরঙ্গজেব দেবীর মন্দির ধ্বংস করতে চাইলে এক ঝাঁক ভ্রমর এসে বাধা দেয়। সেই স্মৃতিতে মন্দিরে ভ্রামরী দেবীর বিগ্রহও প্রতিষ্ঠিত।

মন্দিরের গর্ভগৃহে একটি ঘিয়ের, অপরটি তেলের—দুটি অখণ্ড প্রদীপ নিরবচ্ছিন্ন প্রজ্বলিত থাকে। বলা হয়, মন্দির ধ্বংস করতে না পেরে এবং ভ্রমরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ঔরঙ্গজেব দেবীকে তেলের প্রদীপ দেওয়ার সংকল্প করেন। তাই এর ব্যয়নির্বাহ করত মোগল দরবার, পরে দায়ভার গ্রহণ করে জয়পুর রাজদরবার। স্বামীজীর সময়ে এর দায়িত্বে ছিল জয়পুর দরবার।

নবরাত্রিতে দেবীদর্শন করে স্বামীজী অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং সকলের সঙ্গে সোয়া নটার সময় সিকরগড়ে ফিরে আসেন। তারপর ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সিকরে বাস ও দেবীদর্শন করে খেতড়িরাজের সঙ্গে স্বামীজী ১০ অক্টোবর রওনা হয়ে রবিবার ১১ অক্টোবর ফিরে আসেন খেতড়িতে। সিকররাজ মাধো সিং স্বামীজীকে দেখে এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর অনুরাগী হয়ে পড়েন এবং মাঝে মাঝে তাঁকে দর্শন করতে আসতেন।

১২ অক্টোবর, সোমবার, দশমীর দিনে স্বামীজী খেতড়ি রাজ্যে দশেরা উৎসব দেখেন। পূজা, মেলা ইত্যাদি নানা উৎসবের আয়োজন ছিল। রাত্রে ছিল বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা—তাতেও স্বামীজীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।১৩

এরপর ১৮৯২ সালে মহারাষ্ট্রের পুনায় বালগঙ্গাধর তিলকের অতিথিরূপে স্বামীজী দুর্গাপূজার দিনগুলি অতিবাহিত করেন।১৪ পরের তিন বছর দুর্গাপূজার দিনগুলি তাঁর পাশ্চাত্যে কাটে।

১৮৯৩ সালে দুর্গাপূজার দিনগুলিতে স্বামীজী বাস করছিলেন শিকাগোর জন লায়ন্সের ২৬৭ মিশিগান অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে।১৫ তখন তিনি বিশ্ববিখ্যাত বিবেকানন্দ—আমেরিকায় বেদান্তপ্রচারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। পরের বছর দুর্গাপূজার সময়টাও১৬ কেটেছিল আমেরিকায়—বস্টনের কাছে কেম্ব্রিজে শ্রীমতী বুলের বাড়িতে। পরের দুবছরই স্বামীজী দুর্গাপূজার দিনগুলি কাটিয়েছিলেন লন্ডনে বেদান্তপ্রচারের কাজে।১৭ সেই সময়ে তাঁকে অনেক শারীরিক ও মানসিক কৃচ্ছ্রতা সহ্য করে নিতে হয়েছিল।

১৮৯৭ সালে দুর্গাপূজার সময় (২—৫ অক্টোবর) স্বামীজী ভূস্বর্গ কাশ্মীরে—নৌকায় উহ্লার লেক ধরে শ্রীনগর থেকে বারামুলার পথে।১৮ কাশ্মীর দেবীর লীলাভূমি বলে প্রসিদ্ধ; দেবীর এক নাম ‘কাশ্মীরা’। অবশ্য এই বছর আলমবাজার মঠে ষষ্ঠী তিথিতে (১ অক্টোবর) দুর্গাপূজার জোগাড় ও তৃতীয় কল্পের অধিবাস, সপ্তমীতে দেবীর ঘটে-পটে পূজা ও রাত্রে সংগীতাদি কীর্তন, মহাষ্টমীতে গোপালের মা-সহ ৫০ জন ভক্তের সমাগম, প্রসাদধারণ, মহানবমীতে দেবীর পূজার সঙ্গে সঙ্গে মাস্টার মহাশয়ের লেখা (পরে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত নামে প্রকাশিত) দুবার পাঠের আয়োজন হয়। এর মধ্যে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের ভাগনে হৃদয়রাম, গোপালের মা প্রমুখ। দশমীতে (৫ অক্টোবর) বিজয়াকৃত্য, সন্ধ্যার পরে ভজন-কীর্তন ও আনন্দোৎসব এবং আবার মাস্টার মহাশয়ের লেখার কিছু অংশ পাঠ করার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের ইতি ঘটে।১৯ অন্যান্য বছরের মতোই সেবছরও নবরাত্রিতে স্বামী তুরীয়ানন্দজী চণ্ডীপাঠ করেন এবং স্বামী শুদ্ধানন্দের তন্ত্রধারকত্বে স্বামী প্রকাশানন্দ পূজা করেছিলেন। ভজন-কীর্তনে আনন্দসহকারে দুর্গাপূজা সুসম্পন্ন হয়েছিল। স্বামীজীর কানে নিশ্চয়ই সে-খবর গিয়েছিল, কারণ সেসময় তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী মঠের প্রতিটি খবর চিঠির মাধ্যমে তাঁকে জানানো হতো।

স্বাভাবিকভাবেই স্বামীজীর মনে বাংলায় দুর্গাপূজা দেখার আগ্রহ সঞ্চিত হচ্ছিল। তাই ১৮৯৮ সালে দুর্গাপূজা দেখার আগ্রহে তিনি তাঁর প্রস্তাবিত রাজস্থান, সিন্ধ ও গুজরাট ভ্রমণ স্থগিত রেখে বাংলায় ফিরে এসেছিলেন। ১৮৯৮ সালে তিনি লাহোর থেকে খেতড়িরাজকে চিঠিতে লেখেন : “গত দশ বৎসর বাংলাদেশে দুর্গাপূজা দেখিনি, দুর্গাপূজা সেখানকার একটি ধুমধাম ব্যাপার। আশাকরি, এ বছর পূজা দেখব।”২০ সিন্ধের হরিপদ মিত্রকেও ঐদিনের চিঠিতে তিনি একই কথা জানান।

দুর্গাপূজার চারদিন আগে (চতুর্থী তিথিতে) স্বামীজী মঠে ফিরে আসেন। মঠ তখন নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়িতে। কাশ্মীর-প্রত্যাগত স্বামীজীর ভগ্নস্বাস্থ্য এবং বেড়ে যাওয়া অন্তর্মুখী ভাব দেখে তাঁর গুরুভাইরা চিন্তিত হন। এর ঠিক দিন পনেরো আগেই স্বামীজী ক্ষীরভবানী মন্দিরে জপ, ধ্যান, হোম, অর্চনা ও কুমারীপূজায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। সে-সময়ই তিনি দেবীর বাণী শুনতে পান : “তুই আমাকে র‌ক্ষা করিস? না আমি তোকে র‌ক্ষা করি?” ফলে স্বামীজীর চিন্তা ও কর্মপ্রণালীতে আমূল পরিবর্তন এসে তাঁর মধ্যে এই ভাবটি আবিষ্ট হয়েছিল যে, তিনি ‘জগন্মাতার বালক’। একদিন ভাবাবেশে আচ্ছন্ন হয়ে তিনি ‘Kali The Mother’ কবিতাটি রচনা করেন। সঙ্গী নিবেদিতা প্রমুখকে বলেছিলেন : “আর ‘হরি ওঁ’ নয়; এবার ‘মা মা’।”২১

দেবী মহাশক্তি স্বামীজীর ভাবজগৎকে কতটা আচ্ছন্ন করেছিলেন, তার উল্লেখ পাওয়া যায় ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিকথায়। স্বামীজী তাঁকে বলেছিলেন : “দেখ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কোথাও এমন এক মহাশক্তি আছেন, যিনি নিজেকে প্রকৃতি-সত্তা বলে মনে করেন। তাঁরই নাম কালী, তাঁরই নাম মা!”২২ পরবর্তিকালে জগজ্জননীকে উদ্দেশ করে স্বামীজী একটি স্তোত্রে লিখেছিলেন—

“ক্বাম্বা শিবা ক্ব গৃণনং মম হীনবুদ্ধেঃ
দোর্ভ্যাং বিধর্তুমিব যামি জগদ্বিধাত্রীম্‌।
চিন্ত্যং শ্রিয়া সুচরণং ত্বভয়প্রতিষ্ঠং
সেবাপরৈরভিনুতং শরণং প্রপদ্যে॥
যা মাং চিরায় বিনয়ত্যতিদুঃখমার্গৈঃ
আসংসিদ্ধেঃ স্বকলিতৈর্ললিতৈর্বিলাসৈঃ।
যা মে মতিং সুবিদধে সততং ধরণ্যাং
সাম্বা শিবা মম গতিঃ সফলেঽফলে বা॥”

স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ-কৃত এর বঙ্গানুবাদ—

“বিশ্বপ্রসবিনী তুমি ক্ষুদ্রবুদ্ধি জীব আমি
করিব তোমার স্তুতি বৃথা এই কল্পনা।
সীমাহীন দেশকালে, ধ’রে আছ বিশ্বজালে,
তোমায় ধরিতে হাতে উন্মাদের বাসনা,
অকিঞ্চন ভক্তিধন, রমাভাব্য যে চরণ,
সে পদে শরণ পাই, এই মাত্র কামনা।
স্বরচিত লীলাগার, মনোহর এ সংসার,
সুখ দুঃখ ল’য়ে সদা নানা খেলা খেলিছ,
পূর্ণ জ্ঞান দিবে তাই, জন্ম হ’তে সুখ নাই,
দুঃখপথ দিয়া মোর করে ধরি চলিছ।
সফল নিষ্ফল হই, কভু বুদ্ধিহারা নই,
তোমারি প্রসাদে তুমি সদা মোরে রাখিছ,
তুমি গতি মোর, তাই স্নেহে মাগো পালিছ।”২৩

ফলত এই বছর স্বামীজীর কাছে দেবীপূজা যেন অন্য মাত্রা পেয়েছিল। ১৮৯৮ সালে শারদীয়া নবরাত্রির মধ্যে (১৮ অক্টোবর) স্বামীজী ফিরে আসায় মঠে আনন্দের স্রোত বয়ে গেল। সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর স্বরচিত ‘মৃত্যুরূপা মাতা’ (‘Kali The Mother’)-সহ আরো দুটি কবিতা পাঠ করে শোনালেন সকলকে। নবরাত্রিব্যাপী চণ্ডীপাঠের আয়োজন ছিল। পঞ্চমী ও ষষ্ঠী তিথিতে স্বামীজী নিজে সপ্তশতী হোম করলেন।২৪ সপ্তমীর দিন (২১ অক্টোবর) তিনি মঠে কয়েকজন ভক্তের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন ও স্বামী ব্রহ্মানন্দজী, স্বামী প্রকাশানন্দ ও ব্রহ্মচারী খগেনকে (পরে স্বামী বিমলানন্দ) নিয়ে বিকালে বাগবাজারে শ্রীমাকে প্রণাম করতে যান।২৫ মাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে স্বামীজী কাশ্মীরে ফকিরের অভিশাপে তাঁকে পালিয়ে আসতে হলো বলে অনুযোগ জানালে শ্রীমা বলেছিলেন : “বিদ্যা মানতে হয় বইকি, বাবা!”২৬ বিজয়া দশমীতে (২৪ অক্টোবর) গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্য কয়েকজন ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।২৭ এঁদের মধ্যে ছিলেন শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী। স্বামী ব্রহ্মানন্দজী তাঁকে স্বামীজীর ঊর্ধ্বগামী মনকে নিচে নামিয়ে রাখতে অনুরোধ করেন। এইভাবে আনন্দে কেটে গেল ১৮৯৮ সালের দুর্গাপূজা।

এরপর আবার দুবছর দুর্গাপূজা দেখতে পাননি স্বামীজী। ১৮৯৯ সালের ১১—১৪ অক্টোবর ছিল দুর্গাপূজা। স্বামীজী তখন লেগেট-দম্পতির অতিথি হয়ে নিরিবিলিতে বাস করছেন আমেরিকার ‘রিজলি ম্যানর’-এ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী তুরীয়ানন্দজী, সিস্টার নিবেদিতা, শ্রীমতী বুল ও লেগেট-পরিবার-সহ মাত্র অল্প কিছু ঘনিষ্ঠজন। তার পরের বছর দুর্গাপূজার সময় (১—৪ অক্টোবর ১৯০০) স্বামীজী ছিলেন ‘সভ্যতার রাজধানী’, ‘রঙ-ঢঙ ভোগবিলাসের ভূস্বর্গ’, ‘বিদ্যা-শিল্পের কেন্দ্র’ প্যারিসে—প্রসিদ্ধ ফরাসি লেখক মস্যিয় জুল বোওয়ার অতিথিরূপে। তাঁর সঙ্গে প্যারিস-বাস প্রসঙ্গে স্বামীজী লিখেছিলেন : “[জুল বোওয়া] ধর্মসকলের, কুসংস্কারসকলের ঐতিহাসিক তত্ত্ব-আবিষ্কারে বিশেষ নিপুণ। মধ্যযুগে ইওরোপে যেসকল শয়তান-পূজা, জাদু, মারণ, উচাটন, ছিটেফোঁটা মন্ত্রতন্ত্র ছিল এবং এখনও যা কিছু আছে, সে-সকল ইতিহাসবদ্ধ করে এঁর এক প্রসিদ্ধ পুস্তক। ইনি সুকবি এবং ভিক্তর হ্যুগো, লা মার্টিন প্রভৃতি ফরাসী মহাকবি এবং গ্যেটে, শিলার প্রভৃতি জার্মান মহাকবিদের ভেতর যে ভারতের বেদান্তভাব প্রবেশ করেছে, সেই ভাবের পোষক। বেদান্তের প্রভাব ইওরোপে—কাব্য এবং দর্শনশাস্ত্রে সমধিক।… ইনি অতি নিরভিমান, শান্তপ্রকৃতি, এবং সাধারণ অবস্থার লোক হলেও অতি যত্ন করে আমায় নিজের বাসায় প্যারিসে রেখেছিলেন।”২৮

দ্বিতীয়বার পাশ্চাত্য থেকে ফিরে স্বামীজী পূর্ববঙ্গ ও অসমে তীর্থদর্শনে যান। ১৯০১ সালের মে মাসে সেখান থেকে ফিরে তাঁর মনে দুর্গাপূজার সংকল্প জাগে, শিষ্য শরৎ চক্রবর্তীকে বলেছিলেন : “এবার ভাল হয়ে মাকে রুধির দিয়ে পুজো করব!”২৯ মুখে বললেও আশ্বিন মাস অবধি কোনো আয়োজন কিন্তু করেননি। সেসময় ঘটল এক বিচিত্র ঘটনা!

মহালয়ার আগের দিন স্বামীজী নৌকা করে কলকাতা থেকে মঠে ফিরছেন, হঠাৎ দেখলেন যেন মঠে দুর্গাপূজা হচ্ছে—দেবীর প্রতিমা চারিদিক আলো করে শোভা পাচ্ছে। কাছাকাছি সময় স্বামী ব্রহ্মানন্দজীরও এক অদ্ভুত দর্শন হয়। তিনি দেখেন, দেবী দুর্গা যেন দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে গঙ্গার ওপর দিয়ে এসে একেবারে বেলুড় মঠের বেলতলায় উঠলেন। মঠে এসে স্বামীজী বললেন : “এবার মঠে প্রতিমা এনে দুর্গোৎসবের আয়োজন কর।” স্বামী ব্রহ্মানন্দজী দুদিন সময় চেয়ে নিলেন। এদিকে সাধু-ব্রহ্মচারীরা কিন্তু স্বামীজীর সাধ শুনে উৎসবের আয়োজনে লেগে গেলেন।৩০

মহালয়ার দিন (১২ অক্টোবর) স্বামীজী বিকেলবেলা বেলতলায় বসে বোধনের গান ধরলেন—‘গিরি, গণেশ আমার শুভকারী’। তার পরদিন সকালে স্বামীজী স্বামী ব্রহ্মানন্দজী ও স্বামী প্রেমানন্দজীর সঙ্গে দুর্গাপূজার আয়োজন নিয়ে নানা আলোচনা করতে লাগলেন। স্বামীজীর আদেশ—দুর্গাপূজার সময় শ্রীমাকে নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়িতে নিয়ে আসতে হবে, বালি-উত্তরপাড়া প্রভৃতি নিকটবর্তী জায়গার ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে এবং জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকলের প্রতিমাদর্শন ও প্রসাদগ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া স্বামীজীর বিশেষ নির্দেশ যে, দরিদ্রনারায়ণদের পরিতোষ করে প্রসাদ দিতে হবে।

ইতিমধ্যে ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল গেছেন কুমারটুলিতে প্রতিমার সন্ধানে। সেখানে একটিমাত্র ফরমায়েসি প্রতিমা ছিল—যাদের নেওয়ার কথা ছিল, তারা নেয়নি। সেকথা শুনে কুমোর যত টাকা চায়, তা দিয়ে প্রতিমাটি নিয়ে আসতে বললেন স্বামীজী। গুরুভাইদের আশ্বাস দিয়ে বললেন : “খরচের জন্য ভাবনা নেই—মহামায়ার ইচ্ছা, তা পূর্ণ হবে।”৩১ সেদিনই স্বামীজী বাবুরাম মহারাজ ও কৃষ্ণলাল মহারাজকে সঙ্গে নিয়ে বাগবাজারে এলেন। স্বামীজী বলেছিলেন : “আমরা তো কপনিধারী—আমাদের নামে [পুজো] হবে না।”৩২ সিদ্ধান্ত হয়েছিল—শ্রীমার নামে পূজার সংকল্প হবে। তাই তাঁর অনুমতি নিতে তাঁরা এলেন বাগবাজারে তাঁর বোসপাড়া লেনের বাড়িতে। অনুমতি প্রার্থনা করলে শ্রীমা সম্পূর্ণ অনুমোদন করে বলেন : “হ্যাঁ বাবা, মঠে দুর্গাপূজা করে শক্তির আরাধনা করবে বইকি। শক্তির আরাধনা না করলে জগতে কোন কাজ কি সিদ্ধ হয়? তবে বাবা, বলি দিও না, প্রাণী হত্যা কর না। তোমরা হলে সন্ন্যাসী, সর্বভূতে অভয়দানই তোমাদের ব্রত।”৩৩ সেইমতো স্বামীজীর নবমীতে ‘রুধির কর্দম’ করে পূজার সংকল্প রদ হলো। মঠে পূজার খবর পেয়ে ঠাকুরের গৃহিভক্তেরাও সানন্দে আয়োজনে জুটে এলেন।

স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর ওপর ছিল পূজার উপকরণ সংগ্রহের ভার। তাঁর চেষ্টায় ত্রুটিহীন ব্যবস্থা দেখে স্বামীজী খুব খুশি হলেন। সেইসঙ্গে স্থির হয় পূজক হবেন ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল আর তন্ত্রধারক শশী মহারাজের পিতা কৌল সাধক ভক্তিমান ঈশ্বরচন্দ্র ভট্টাচার্য।

১৭ অক্টোবর (৩১ আশ্বিন), বৃহস্পতিবার পঞ্চমী তিথি। কুমারটুলি থেকে নৌকা করে প্রতিমা এনে ঠাকুরঘরের নিচের দালানে (বর্তমানে মঠ অফিসের একতলায়) রাখা হলো। প্রতিমা ঢোকানো মাত্র আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল, তবে প্রতিমা নিরাপদ দেখে স্বামীজী নিশ্চিন্ত হলেন। মঠের উত্তরদিকে দুর্গাপূজার প্রকাণ্ড মণ্ডপ৩৪ তৈরি। আর যাতে ঝড়জলে কোনোরকম ক্ষতি না হয়, তার দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছিল।

১৮ অক্টোবর, ষষ্ঠী। বর্তমানে যেখানে স্বামীজীর সমাধিমন্দির, তার সামনের বেলতলায় বোধন ও আমন্ত্রণ-অধিবাস সম্পন্ন হলো। সকলের কণ্ঠে তখন গান—“বিল্ববৃক্ষমূলে পাতিয়া বোধন,/ গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন।”৩৫ এদিন সন্ধ্যায় শ্রীমাও সঙ্গিনীদের নিয়ে বাগবাজার থেকে নীলাম্বরবাবুর বাগানবাড়িতে এসে উঠলেন। পূজার সমস্ত ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে শ্রীমা বলেছিলেন : “প্রতি বৎসরই মা দুর্গা এখানে আসবেন।”৩৬

১৯ অক্টোবর, শনিবার, সপ্তমী। প্রতিমা মণ্ডপে অধিষ্ঠিত। কলকাতা থেকে বহু প্রাচীন ও নবীন ভক্ত পূজা দেখতে এসেছেন। শ্রীমায়ের অনুমতি নিয়ে পূজক ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল মহারাজ পূজারম্ভ করলেন। মন্ত্রের সুললিত উচ্চারণ ও ভক্তিপূর্ণ পূজা দেখে সকলে মুগ্ধ। জাতিবর্ণ-নির্বিচারে সকলেই, এমনকী গোঁড়া ব্রাহ্মণেরাও প্রসাদধারণ করলেন। সদানন্দময় স্বামীজী এদিকে-ওদিকে পায়চারি বা গল্পগুজব করছেন, কখনো ধ্যানসমাহিত হয়ে দুর্গামণ্ডপে বসে আছেন, কখনো বা গুনগুন করে গান গাইছেন—“সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী।”৩৭ হঠাৎ স্বামীজী শ্রীমাকে এসে বললেন : “মা, আমার জ্বর করে দাও।” একটু পরেই তাঁর হাড় কেঁপে জ্বর এল। এতে চিন্তিত শ্রীমাকে প্রবোধ দিয়ে স্বামীজী বললেন : “কোন চিন্তা নেই মা। আমি সেধে জ্বর নিলুম এইজন্য যে, ছেলেগুলো প্রাণপণ করে তো খাটছে তবু কোথায় কি ত্রুটি হবে আমি রেগে যাব, বকব, চাই কি দুটো থাপ্পড়ই মেরে বসব, তখন ওদেরও কষ্ট হবে, আমারও কষ্ট হবে। তাই ভাবলুম—কাজ কি, থাকি কিছুক্ষণ জ্বরে পড়ে।”৩৮

২০ অক্টোবর, রবিবার, মহাষ্টমী। সপ্তমীর রাত থেকে স্বামীজীর জ্বর হওয়ায় সেদিন আর তিনি পুজোয় যোগ দিতে পারেননি। মঠে হাজার হাজার মানুষ পুজো দেখতে ও পুষ্পাঞ্জলি দিতে এল। কেউ কেউ স্বামীজীকে দর্শন করতে চাইলেও অসুস্থতার জন্য দেখা হলো না। তবু চারিদিকে আনন্দের হাট—সকলেই প্রসাদ পেল। স্বামীজীর সাধমতো দরিদ্রনারায়ণের সেবা হলো।

পরদিন ২১ অক্টোবর সোমবার, ভোর সাড়ে ছটার কিছুক্ষণ পরে সন্ধিপূজা। স্বামীজী মণ্ডপে নেমে এলেন—মুখে অসুখের চিহ্নমাত্র নেই। পূজার সময় জবা ও বিল্বপত্র তিনবার দেবীর পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি দিলেন—মুখমণ্ডল উজ্জ্বল, সস্মিত, জ্যোতির্ময়।৩৯

দুর্গাপূজা,বেলুর মঠ : পঞ্চাশের দশক

সেদিন যথাবিহিত নজন কুমারীকে পূজা করা হলো। পাদ্য, অর্ঘ্য, শাঁখা, পুষ্পাঞ্জলি ও দক্ষিণা দিয়ে পূজা করে তাঁদের সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন স্বামীজী। এই কুমারীদের অন্যতম ছিলেন গৌরী-মার প্রিয় শিষ্যা পরবর্তিকালের দুর্গাপুরী দেবী। স্বামীজী এত ভাবাবিষ্ট হয়েছিলেন যে, কুমারীর কপালে রক্তচন্দনের ফোঁটা পরানোর সময় স্বামীজী শিউরে উঠে বলেছিলেন : “আহা, দেবীর তৃতীয় নয়নে আঘাত লাগেনি তো!” এই কুমারীপূজাতে শ্রীমাও উপস্থিত ছিলেন।৪০

স্বামীজী এক চিঠিতে হরিপদ মিত্রকে লিখেছিলেন : “বাবাজী, শাক্ত শব্দের অর্থ জানো? শাক্ত মানে মদ-ভাঙ্‌ নয়, শাক্ত মানে যিনি… সমগ্র স্ত্রীজাতিতে সেই মহাশক্তির বিকাশ দেখেন।”৪১ স্বামীজীর আচরণে ‘শাক্ত’ কী, তার যথাযথ প্রকাশ দেখা গেল কুমারীপূজায়।

মহানবমীতে পূজাশেষে শ্রীমার দ্বারা দক্ষিণান্ত করা হলো। স্বামীজী শ্রীমাকে দিয়ে তন্ত্রধারককে ২৫ টাকা দক্ষিণা দেওয়ালেন।৪২ হোমান্তে যজ্ঞের তিলক কপালে ধারণ করে স্বামীজীর মুখমণ্ডল দিব্যভাবে পরিপূর্ণ। সেদিন সন্ধ্যারাত্রিকের পর স্বামীজী স্বয়ং ভজন গান ধরলেন। ঠাকুর নবমীর রাতে যেসব গান গাইতেন, তার কয়েকটি গাওয়া হলো।

২২ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক বিজয়া দশমী তিথি। বিকেলে দলে দলে লোক আসতে লাগল প্রতিমা- বিসর্জন দেখার জন্য। গঙ্গাতীর লোকে লোকারণ্য। ঢাক, ঢোল, রোশনচৌকি, ইংরেজি ব্যান্ডের বাদ্য সহকারে প্রতিমাকে নৌকায় ওঠানো হলো। চারিদিক ‘মহামায়ী-কী জয়, দুর্গামায়ী-কী জয়’ ধ্বনিতে মুখরিত। এমন সময় বৃন্দাবনি চাদরের গাঁতি বেঁধে স্বামী ব্রহ্মানন্দজী নৌকায় চেপে বাদ্যের তালে তালে নৃত্য করতে লাগলেন। তাঁর সেই মনোরম নৃত্য দেখে সকলে মুগ্ধ। অসুস্থতার জন্য স্বামীজী নিচে নামেননি, কিন্তু তাঁর প্রিয় ‘রাজা’ নৃত্য করছেন শুনে বারান্দায় এসে দেখতে লাগলেন। নৃত্য শেষে আবার জয়ধ্বনি দিতে দিতে মাঝগঙ্গায় বিসর্জন করা হলো মৃন্ময়ী প্রতিমা। তারপর বিজয়ার প্রীতি-শুভেচ্ছার পালা। পরদিন একাদশী তিথিতে শ্রীমা ফিরে গেলেন বাগবাজারে।৪৩ সাঙ্গ হলো স্বামীজীর অভীপ্সিত প্রতিমায় দুর্গাপূজা।

শ্রীমায়ের কথায় জানা যায় যে, স্বামীজীর মা ভুবনেশ্বরী দেবীও পূজায় আমন্ত্রিত ছিলেন। শ্রীমায়ের ভাষায়—“তার মাকেও পূজার সময় মঠে নিয়ে এসেছিল। সে বেগুন তোলে, লঙ্কা তোলে আর এ বাগান ও বাগান ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। মনে একটু অহং যে, আমার নরেন এসব করেছে। নরেন তখন তাকে এসে বলে, ‘ওগো, তুমি করছ কি? মায়ের কাছে গিয়ে বস না—লঙ্কা ছিঁড়ে বেগুন ছিঁড়ে বেড়াচ্ছ। মনে করছ বুঝি তোমার নরু এসব করেছে। তা নয়, যিনি করবার তিনিই করেছেন, নরেন কিছু নয়।’ মানে ঠাকুরই করেছেন।”৪৪

সেবার দুর্গাপূজায় ১৪০০ টাকা খরচ হয়েছিল।৪৫ স্বামীজীর নিজের লেখনীতে সে-পূজার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায়—“এবছর আমাদের মঠে বিরাট পুজো হয়ে গেল। চার অহোরাত্রব্যাপী আমাদের সবচেয়ে বড় পুজো—মাতৃ উপাসনা। আমরা মায়ের একটি মৃন্ময়ী প্রতিমা এনেছিলাম—তাঁর দশ হাত, এক পা সিংহের পীঠে, অপর পা অসুরের উপর। তাঁর দুই মেয়ে—ঐশ্বর্যের দেবী এবং বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী তাঁর দু’পাশে পদ্মের উপরে। নীচে তাঁর দুই ছেলে—যুদ্ধের দেবতা ও জ্ঞানের দেবতা।

“হাজার হাজার লোক এসেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে আমি পূজা দেখতে পাই নি। ধুম জ্বরে আমি সারা‌ক্ষণ অসুস্থ ছিলাম…।”৪৬

স্বামীজীর স্থূলদেহে দেখা এই শেষ দুর্গাপূজা। এই পূজার মাধ্যমে স্বামীজী একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করে গেলেন। কয়েক বছর আগে তিনি শ্রীমাকে ‘জ্যান্ত দুর্গা’ বলে সম্বোধন করে তাঁর পূজা দেখাবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন। এই দুর্গাপূজার দ্বারা তা সুপ্রতিষ্ঠিত হলো। দুর্গাপূজার দিনগুলিতে শ্রীমা পূজামণ্ডপে উপস্থিত থাকতেন এবং ভক্তেরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পর প্রতিদিন মণ্ডপের একপাশে দাঁড়ানো শ্রীমাকেও পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে পূজা করতেন। ভাবসমাহিতা শ্রীমা নীরবে ভক্তদের পূজা গ্রহণ করতেন। পূজা-প্রাঙ্গণের বর্ণনা এক প্রত্যক্ষদর্শীর লেখায়—“ভক্তেরা দেখিতেছেন—একদিকে দশপ্রহরণধারিণী সিংহবাহিনী অসুরদলনী দশভুজা… মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী দেবীর আবির্ভাব, অপর দিকে স্বয়ং মহাশক্তি মানবী দেহে শ্রীশ্রীজগজ্জননী মাতৃরূপে অবতীর্ণা—উপাস্য ও উপাসিকা ভাবে পূজামণ্ডপে বিদ্যমানা। এই অপূর্ব ছবি দেখিয়া আনন্দরসে ভক্তদের হৃদয় পরিপ্লুত হইয়াছিল।”৪৭ পূজামণ্ডপে দেবী দুর্গা ও জগজ্জননী শ্রীমার যুগপৎ উপস্থিতি—স্বামীজীর দুর্গাপূজার পরমক্ষণ।

তথ্যসূত্র

১. দ্র: স্বামী বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০২০, পৃ: ২৭
২. দত্ত, মহেন্দ্রনাথ, কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা, মহেন্দ্র পাবলিশিং কমিটি, কলিকাতা, পৃ: ১২৩—২৫
৩. স্বামী প্রভানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলা, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৮৫, ১ম খণ্ড, পৃ: ৩৮
৪. দ্র: ঐ, পৃ: ৪২। এই গ্রন্থের ৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, কথামৃত অনুসারে ঘটনাটি নবমী তিথির, অথচ মাস্টার মহাশয়ের ডায়রি অনুসারে এটি সপ্তমীর ঘটনা। ‘পুঁথি’র মতেও সেদিন সপ্তমীর সন্ধ্যা। স্বামী অভেদানন্দজী, স্বামী সারদানন্দজী ও বৈকুণ্ঠনাথ সান্যালের মতে সন্ধিপূজার সময়ে।
৫. দ্র: স্বামী অভেদানন্দ, আমার জীবনকথা, শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলিকাতা, ১৯৭৩, পৃ: ৭৬
৬. দ্র: অন্ত্যলীলা, ১ম খণ্ড, পৃ: ৪৪
৭. শ্রীম-কথিত, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৭, অখণ্ড, পৃ: ৯২৪
৮. দ্র: স্বামী প্রভানন্দ, রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৩, পৃ: ৫০
৯. বিবেকানন্দ-জীবনী গবেষক ডঃ শ্যামলী চৌধুরী প্রদত্ত তথ্য
১০. পুরানো দুর্গাপূজার তারিখগুলি https://www.drikpanchang.com/navratri/durga-puja/durga-puja-calendar.html অনুসারে এবং শ্রীচন্দ্র বিদ্যানিধি-কৃত পুরাতন পুঞ্জিকা অনুসারে।
১১. দ্র: শর্মা, ঝাবরমল, রাজস্থান মেঁ বিবেকানন্দ, ১ম খণ্ড, পৃ: ৬১-৬২
১২. চুরু, ঝুনঝুনু, সিকর জেলাগুলিকে শেখাওয়াতি অঞ্চল (অর্থাৎ শেখাওয়াত রাজপুতদের এলাকা) বলা হয়।
১৩. Sharma, Benishankar, Swami Vivekananda : A Forgotten Chapter of His Life, Sharman Publishers, Calcutta, 1982, p. 43। শ্রীচন্দ্র বিদ্যানিধি-কৃত পুরাতন পঞ্জিকা অনুসারে ৯ অক্টোবর ছিল সপ্তমী ও ১৩ অক্টোবর দশমী।
১৪. সেবছর দুর্গাপূজা ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর (সপ্তমী থেকে দশমী তিথি)
১৫. ১৭—২০ অক্টোবর ১৮৯৩ ছিল সপ্তমী থেকে দশমী
১৬. ৬—৯ অক্টোবর ১৮৯৪
১৭. ২৫—২৮ সেপ্টেম্বর ১৮৯৫ ও ১৩—১৬ অক্টোবর ১৮৯৬
১৮. Chowdhury, Dr. Shyamali, A Chronology of Events in the Life of Swami Vivekananda, Ramakrishna Mission Institute of Culture, Kolkata, 2021, p. 47
১৯. বেলুড় মঠের ডায়রি
২০. স্বামী বিবেকানন্দ, পত্রাবলী, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০২২, পৃঃ ৬৪২
২১. স্বামী গম্ভীরানন্দ, যুগনায়ক বিবেকানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৪, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৩৭
২২. ভগিনী নিবেদিতা, স্বামীজীকে যেরূপ দেখিয়াছি, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৯২, পৃঃ ৯৯
২৩. ২৩স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১২, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ২০৩, ২০৫
২৪. দ্র: রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা, পৃঃ ১২৪
২৫. বেলুড় মঠের ডায়েরি
২৬. স্বামী গম্ভীরানন্দ, শ্রীমা সারদা দেবী, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৪, পৃঃ ১৪৩
২৭. বেলুড় মঠের ডায়েরি
২৮. স্বামী বিবেকানন্দ, পরিব্রাজক, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৩, পৃঃ ৬৯-৭০। পুরাতন পঞ্জিকা অনুসারে সেবার তিথি‌ক্ষয়ের জন্য তিনদিনেই দুর্গাপূজা শেষ হয়। তাই ৩ অক্টোবর একই দিনে নবমী ও দশমীর পূজা হয়।
২৯. চক্রবর্তী, শরচ্চন্দ্র, স্বামি-শিষ্য-সংবাদ, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০২২, পৃ: ২১৯
৩০. দ্র: সেন, কুমুদবন্ধু, স্মৃতিকথা : শ্রীমা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণমণ্ডলী, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রম, হাওড়া, ২০০১, পৃ: ৪৩-৪৪
৩১. ঐ, পৃ: ৪৩
৩২. শ্রীমা সারদা দেবী, পৃঃ ১৫৪
৩৩. স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ (সংকলক ও সম্পাদক), যুগদিশারী বিবেকানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০০৪, পৃঃ ৩২৭
৩৪. মঠে আগে হোগলাপাতা দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হতো বলে প্রাচীনদের মুখে শোনা যায়।
৩৫. স্মৃতিকথা : শ্রীমা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণমণ্ডলী, পৃঃ ৪৪
৩৬. স্বামী অপূর্বানন্দ (সংকলক), শিবানন্দ-বাণী, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৮, ২য় ভাগ, পৃঃ ৯৮
৩৭. স্মৃতিকথা : শ্রীমা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণমণ্ডলী, পৃঃ ৪৫
৩৮. শ্রীশ্রীমায়ের কথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১১, অখণ্ড, পৃঃ ৪৫
৩৯. দ্রঃ স্মৃতিকথা : শ্রীমা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণমণ্ডলী, পৃঃ ৪৬
৪০. দুর্গাপুরী দেবী, সারদা-রামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীসারদেশ্বরী আশ্রম, কলিকাতা, দ্বাদশ মুদ্রণ, পৃঃ ১৭৪
৪১. পত্রাবলী, পৃঃ ৯৯
৪২. দ্রঃ শ্রীশ্রীমায়ের কথা, পৃঃ ৪৫
৪৩. দ্রঃ স্মৃতিকথা : শ্রীমা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণমণ্ডলী, পৃঃ ৪৬
৪৪. শ্রীশ্রীমায়ের কথা, পৃঃ ৪৫
৪৫. দ্রঃ ঐ
৪৬. The Complete Works of Swami Vivekananda, Advaita Ashrama, Calcutta, 1999, vol. IX, p. 169
৪৭. স্মৃতিকথা : শ্রীমা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণমণ্ডলী, পৃঃ ৪৫

‘স্বামী কৈলাসানন্দ স্মারক রচনা’রূপে এটি প্রকাশিত হলো।
রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় মঠ, হাওড়া