‘তন্যতে বিস্তার্যতে জ্ঞানম্ অনেন ইতি তন্ত্রম্’ অর্থাৎ যে-শাস্ত্রের দ্বারা জ্ঞান বৃদ্ধি পায়, তাকে তন্ত্র বলে। কামিকাগম তন্ত্রকে বলা হয়েছে এক শ্রেণির টেক্সট (Text), যেখানে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে—‘তনোতি বিপুলানর্থান্ তত্ত্বমন্ত্র-সমন্বিতান্’ অর্থাৎ যা তত্ত্ব ও মন্ত্রকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে। দুটি শব্দ ‘তত্ত্ব’ ও ‘মন্ত্র’র বিশেষ অর্থ আছে : তত্ত্বের অর্থ—মহাজাগতিক মূলতত্ত্বের বিজ্ঞান (Science of Cosmic Principles)। আর মন্ত্রের অর্থ—অতীন্দ্রিয় শব্দের বিজ্ঞান (The Science of the mystic sound)। সুতরাং ঐসকল বিজ্ঞানের মধ্যে প্রয়োগ-সম্বন্ধ আছে। উদ্দেশ্য—আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভ করা। সেজন্য তন্ত্রকে শ্রুতি বা আগম, অনুভূতি হিসাবে ধরা হয়—যা স্মৃতি বা নিগম বা ঐতিহ্যের বিপরীত। তন্ত্রকে বেদের সঙ্গে এক ধরা হয়, সেজন্য এর অপর নাম ‘শ্রুতিশাখাবিশেষঃ’—বেদের একটি শাখা। তন্ত্রের সবচেয়ে পুরানো পাণ্ডুলিপির মধ্যে নিঃশ্বাসতত্ত্ব সংহিতা-তে আছে—তন্ত্র হচ্ছে বেদান্ত ও সাংখ্যের অতীন্দ্রিয় বিজ্ঞানের সমন্বয়। প্রকৃতপক্ষে, ব্রহ্ম বা শিবের পরম সত্যের সঙ্গে তাঁর শক্তির প্রকাশস্বরূপ এই বিশ্বের বৈধতাকে সংযুক্ত করে তন্ত্র। শিবের অর্ধাঙ্গিনী তাই প্রথম বেদান্ত উপদেশ দেয়, তারপর সাংখ্যের পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব এবং শেষে শিবতন্ত্র। প্রাচীন তন্ত্রগ্রন্থের অন্যতম পিঙ্গলামাতাতে উল্লেখ আছে —তন্ত্র প্রথম বলেন শিব, তাঁর কাছ থেকে পরম্পরায় তা চলে আসছে। এটি আগম, তবে ছন্দোবদ্ধ (বেদ)।”১
পরবর্তিকালে সব তন্ত্রশাস্ত্র ঐ কথাই বলে থাকেন। কুলার্ণবতন্ত্র, প্রপঞ্চসার এবং অন্যান্য তন্ত্রগ্রন্থে আছে যে, কুলধর্মের ভিত্তি বেদান্তের সত্য, বৈদিক মহাবাক্য ও মন্ত্র। নিরুত্তরতন্ত্রকেও ‘পঞ্চমবেদ’ বলা হয়। এইটি সকলে অনুসরণ করেছেন।২
তন্ত্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে বেদের ক্রিয়াকাণ্ডের মতোই। এর উদ্দেশ্য—শিবশক্তির মিলন। তন্ত্র শুধুমাত্র নতুন নতুন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে না, বৈদিক ধর্মের কঠিন কঠিন ক্রিয়াকে আরো সরলীকরণ করে। উপনিষদ ও ব্রাহ্মণে এসব দেখা যায়। তন্ত্রসাধনার দার্শনিক ভিত্তি সাংখ্য ও যোগ। এককথায় বলা যায়, তন্ত্রের উৎস বেদ।৩
শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা পুস্তকের ভূমিকাতে উপেন্দ্রকুমার দাস তন্ত্রের গভীরতা ব্যাখ্যা করেছেন : “তন্ত্র অদ্বৈততত্ত্বের সাধনশাস্ত্র, পারমার্থিক শাস্ত্র, এ শাস্ত্র লৌকিকবুদ্ধিগম্য বিচারশাস্ত্র নয়। গুরুগম্য এই শাস্ত্রের গভীরতত্ত্ব সদ্গুরুর উপদেশ ভিন্ন হয় না।
“তন্ত্রশাস্ত্র প্রত্যক্ষফলপ্রদ, বৈজ্ঞানিক যুগের উপযোগী শাস্ত্র। লোকে যেভাবে বিজ্ঞানের সত্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে সেই ভাবে তন্ত্রের সত্য নিয়েও যে-কোনও অধিকারী ব্যক্তি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে স্বয়ং তা প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এদিক দিয়ে তন্ত্রশাস্ত্রকে সাধন-বিজ্ঞান বলা যায়।… অনেক নিকৃষ্ট তন্ত্রও রচিত হয়েছে। উত্তম তন্ত্রমতে এসব তামস মন্ত্র এবং বর্জনীয়।… তবে তন্ত্রশাস্ত্রের মর্ম শ্রদ্ধাবান সন্ধানী ব্যক্তির অবিদিত থাকে না।
‘তন্ত্রশাস্ত্রের মূলভিত্তি সেই অদ্বৈতবাদ, সেই সোঽহং এবং সাহং একত্র সংযুক্ত হইয়া নিখিল হিন্দুশাস্ত্রের মূলভিত্তি রচনা করিয়াছে’। দীর্ঘকাল ধরে তন্ত্র ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি বড় অংশ অধিকার করে আছে, তার ধর্মজীবনের এক বিরাট অংশকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। তাই তন্ত্রের প্রভাব সর্বজনীন এবং সর্বভারতীয়।”৪
তন্ত্রশাস্ত্রে শক্তিসাধনাই মুখ্য। শক্তিসাধনার আদি রূপ দেবীপূজা। শক্তি ব্রহ্মস্বরূপিণী। শক্তিসাধনাতে ভুক্তি ও মুক্তি—দুইই পাওয়া যায়। এই সাধনায় দুটি পথ—প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি। তবে শক্তিসাধনা প্রধানত নিবৃত্তিমার্গের পথ, শক্তিসাধনা পরমার্থত অদ্বৈতব্রহ্মসাধনা। এটি জ্ঞানমূলক। শক্তিসাধনার সাধ্যা পরব্রহ্মস্বরূপিণী মহাশক্তি। সর্বদেবময়ী দেবীর বহু রূপ, তবে প্রধানত দশমহাবিদ্যারূপেই তিনি শক্তিসাধনায় সাধ্যা। দশমহাবিদ্যার মধ্যে আবার কালী, তারা, ষোড়শীর সাধনা বিশেষভাবে প্রচলিত। আদ্যা মহাবিদ্যাই কালী।৫
শ্রীরামকৃষ্ণ আদ্যাশক্তির স্বরূপ অতি সহজ ভাষায় ব্যক্ত করেছেন—যিনি ব্রহ্ম তিনিই কালী। কালী আদ্যাশক্তি। যখন নিষ্ক্রিয়, তখন বলি ব্রহ্ম। যখন সৃষ্টি স্থিতি পালন করেন, তখন বলি শক্তি—কালী। ব্রহ্ম আর কালী অভেদ। কালী মানলে ব্রহ্মকে মানতে হয়। ব্রহ্ম মানলে কালী মানতে হয়। এই ব্রহ্মই একরূপে নিত্য, অন্যরূপে লীলা। সমাধিস্থ না হলে শক্তির লীলারাজ্য ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই। ধ্যান, চিন্তা—সবই শক্তির এলাকার মধ্যে। এলাকার বাইরে তুরীয় অবস্থা—অনির্বচনীয়। মা একরূপে অনন্ত ভাবময়ী, আবার ভাবাতীতা।৬ মা-ই সবকিছু—তিনিই ভুক্তি, প্রবৃত্তি, নিবৃত্তি, ভ্রান্তি, বিবেক, শান্তি, সৎ-অসৎ, নিত্য-অনিত্য, জীব-জগৎ, চতুর্বিংশতি তত্ত্ব, যন্ত্রী, মহামোহ-পরমার্তিতন্ত্রী। শ্রীরামকৃষ্ণের অনুভূতি—“মহামায়ারূপিণী মা ব্রহ্মজ্ঞানের দ্বারে পাহারা দিচ্ছেন। তিনি পথ ছেড়ে না দিলে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয় না।” ঈশ্বরের করুণা ভিন্ন কিছুই হয় না। তবে সেইসঙ্গে চাই পুরুষকার, চেষ্টা, উদ্যম। শ্রীরামকৃষ্ণের পথেই স্বামী সারদানন্দজীর তন্ত্রসাধনা।৭
স্বামী সারদানন্দজীর তন্ত্রসাধনা তন্ত্রশাস্ত্রমতেই হয়েছিল। তিনি তন্ত্রসাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। এই সিদ্ধির ফলশ্রুতি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গতে দেখি, যেখানে স্বামী সারদানন্দজী শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনার উদ্দেশ্য ও অন্যতম কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেন—কঠোর সংযমকে ভিত্তিরূপে অবলম্বন করে তন্ত্রসাধনায় প্রবৃত্ত হলে ফল প্রত্যক্ষ হয়, নতুবা নয়—একথা লোকে কালধর্মে প্রায় ভুলে গিয়েছিল এবং সেগুলির অনুষ্ঠিত কুক্রিয়াগুলির জন্য তন্ত্রশাস্ত্রকেই দায়ী করে সাধারণ মানুষ তার নিন্দাবাদে প্রবৃত্ত হয়েছিল। অতএব নারীমাত্রে মাতৃভাবে পূর্ণহৃদয় ঠাকুরের তন্ত্রসাধনায় সাফল্য দেখে যথার্থ সাধকগণ কোন লক্ষ্যে চলতে হবে তার নির্দেশলাভ করে যেমন উপকৃত হয়েছে, তেমনি তন্ত্রশাস্ত্রের প্রামাণ্যও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ঐ শাস্ত্র মহিমান্বিত হয়েছে।৮ কারণ, স্বামী সারদানন্দজী বলছেন—তন্ত্রোক্ত ক্রিয়ার অনুষ্ঠান করে স্বয়ং প্রত্যক্ষ অনুভব না করলে পরবর্তিকালে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে আগত বিভিন্ন প্রকৃতিবিশিষ্ট ভক্তদের মানসিক অবস্থা অনুযায়ী তাদের সাধনপথে সহজে অগ্রসর করিয়ে দিতে পারবেন না বলেই যে জগন্মাতা তাঁকে এই পথের সঙ্গে সম্যক পরিচিত করিয়েছিলেন—একথা বুঝতে পারা যায়।৯
স্বামী সারদানন্দজী শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনায় যেমন অনুভবগুলির কথা উল্লেখ করেছেন, তেমনি সিদ্ধির নির্যাসও দিয়েছেন—ঠাকুর বলতেন, ঐসকল সাধনশেষে তাঁর সমস্ত পদার্থে অদ্বৈতবুদ্ধি এত বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, ছোট থেকে তিনি যাকে নগণ্য বস্তু বলে বিবেচনা করতেন, তাকেও এরপর থেকে মহাপবিত্র বলে বোধ করতেন। বলতেন—তুলসী ও সজনেগাছের পাতা একইরকম পবিত্র বোধ হতো।১০ তন্ত্রশাস্ত্র সম্বন্ধে ইতিপূর্বে যা আলোচিত হয়েছে—তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনা।
শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনার সার্থক উত্তরসূরি স্বামী সারদানন্দজী। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, শরৎ মহারাজের আদর্শ হলেন শিব। শিবের গুণাবলিতে পরিপূর্ণ তিনি। তিনি বলেছিলেন, শরৎ যেন তাঁকে শক্তি বলে ভাবেন। বস্তুত, স্বামী সারদানন্দজীর সব শক্তির উৎস ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীমা। তিনি ছিলেন তাঁদের শক্তিপ্রকাশের অস্বতন্ত্র যন্ত্র। শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে তিনি প্রার্থনা করেছিলেন সর্বভূতে ব্রহ্মদর্শনের। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছিলেন। ব্রহ্মজ্ঞ স্বামী সারদানন্দজী নিজেই বলেছেন—শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে যা বলেছিলেন, তাঁর কৃপায় তিনি সেটা বেশ অনুভব করছেন।১১
তন্ত্রের ব্যাপারে স্বামী সারদানন্দজীর ছিল আবাল্য আগ্রহ। উত্তরাখণ্ডে প্রব্রজ্যার পর মঠে ফিরে এসে তিনি গভীরভাবে তন্ত্রশাস্ত্র পড়েছিলেন। এই সময় তিনি বিশ্লেষণমূলক তন্ত্র-প্রবন্ধ লিখেছিলেন—‘Tantrikism or the worship of Shakti’ (তন্ত্র অথবা শক্তিপূজা), যা প্রকাশিত হয়েছিল ‘ব্রহ্মবাদিন’ পত্রিকায় (শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ১৮৯৬)।১২ স্বামী সারদানন্দজীর ব্যাখ্যা : “ভারতবর্ষে আমাদের মধ্যেও শক্তির উপাসক বর্তমান, কিন্তু ভারতীয় উপাসকবৃন্দ সর্বদাই সন্ধানী দৃষ্টি সঞ্চালন করেছেন যবনিকার অপরপার্শ্বে এবং বর্তমান বিজ্ঞানে বর্ণিত শক্তি অপেক্ষা ভিন্নতর এমন একটি রূপ আবিষ্কার করেছেন যা কিনা উপাসনার যোগ্য। ধ্যান, ভক্তি ও উপাসনার দ্বারা অতীন্দ্রিয় অনুভূতিগম্য সেই আদি কারণে তাঁরা উপনীত হয়েছেন, যে-উৎস থেকে মনুষ্যজ্ঞাত শক্তির সমস্ত রূপের উদ্ভব। তাঁরা জেনেছেন যে, এই শক্তি কখন স্থিতিশীল কখন বা গতিশীল, সময়ের গণ্ডিতে এর কোন আদি নেই এবং কল্পের অন্তলগ্নে যখন শক্তির প্রকাশ বা পরিবর্তনের পালা শেষ হয়, তখন তা প্রত্যাবর্তন করে স্থিতিলাভ করে ব্রহ্মের আধারে। তাই ভারতীয়রা যেখানেই কোন ভৌত, জাগতিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক শক্তির প্রকাশ দেখতে পান, তাঁরা জানেন যে, তা সেই আদি শক্তি থেকেই জাত। সুতরাং বিভিন্ন আধারে বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত আদ্যাশক্তির অনুরূপ পূজন তাঁরা যথাযথভাবে সম্পন্ন করে থাকেন। ভারতীয়রা অনুভব করেছেন যে, এই শক্তি সর্বেশ্বরত্ব, সর্বজ্ঞাতৃত্ব ও সর্বময় প্রেমস্বরূপের আধারস্বরূপ। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, প্রেম ও ভক্তিসম্পন্ন হয়ে যাঁরা এই শক্তির উপাসনা করেন, তাঁরাই মুক্তিলাভ করেন। আর ভারতীয়রা এও বলেন যে, এই শক্তিই অবিদ্যারূপে মানবকে জাগতিক বন্ধনে ও জগতের সহস্র কর্মপাশে বদ্ধ করে থাকেন।
‘সা বিদ্যা পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী।
সংসারবন্ধহেতুশ্চ সৈব সর্বেশ্বরেশ্বরী॥’
(শ্রীশ্রীচণ্ডী, ১।৫৭-৫৮)
তিনি চিরন্তনী পরমা জ্ঞানরূপা, মুক্তির হেতুরূপা। তিনিই আবার সংসারবন্ধনের কারণস্বরূপা এবং কেবল তিনিই সর্বনিয়ন্তা ঈশ্বরের ঈশ্বরী।”১৩
স্বামী সারদানন্দজীর লেখনীতে বেদোক্ত তন্ত্ররহস্যের নিগূঢ় তত্ত্ব-ব্যাখ্যা অতি সহজ, সরল—“…কোন অবস্থাতেই ব্রহ্ম বা পুরুষের থেকে শক্তিকে পৃথক করা সম্ভব নয়।… এই শক্তির কোন আদি নেই।”১৪
“বেদান্ত আহ্বান জানিয়ে বলে—হে অমৃতের পুত্রগণ, তোমরা জাগ।… অনাদিকাল থেকে তুমি স্বরূপত মুক্ত, বিশুদ্ধ, নির্বিকার ও পবিত্র। এই নক্ষত্রসমূহের আবির্ভাবের পূর্বে তুমি বিরাজমান ছিলে এবং সমস্ত জগৎপ্রপঞ্চ যখন ধূলিকণায় পরিণত হবে, তখনও তুমি থাকবে অবিনশ্বর। তুমিই নিজের কর্মের দ্বারা আপনাকে বন্ধনে জড়িয়ে রেখেছ এবং এই বন্ধন থেকে মুক্তির উপায়ও শুধু তোমারই অন্তরে নিহিত। ওঠ, জাগ, তোমার কর্মের বন্ধনমুক্তির ক্ষমতা শুধু তোমারই হস্তে বর্তমান।”১৫
“তন্ত্র এ-স্থলে বলে—হে মানব, আপেক্ষিক জগতের এই বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার শক্তি তোমার নেই। তোমার চতুষ্পার্শ্বে, ঊর্ধ্বে, বহিঃপ্রদেশের সর্বত্রই মায়া তোমায় আবৃত করে রেখেছে।… কায়ক্লেশেই হোক অথবা মনোবুদ্ধির চরম সাধনার দ্বারাই হোক, যতই চেষ্টা কর না কেন, যতক্ষণ অবধি শক্তিরূপা এই দেবী প্রসন্না হয়ে তোমার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে না দিচ্ছেন, এই ইন্দ্রিয়জালসৃষ্ট মিথ্যাপ্রপঞ্চের দুর্গ থেকে তোমার নিষ্ক্রমণ সম্পন্ন করে না দিচ্ছেন, ততক্ষণ অবধি তোমার সাফল্যের আশা সুদূরপরাহত।
‘সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে।’
—যার প্রতি তিনি প্রসন্না, তাকে তিনি জ্ঞানের আলোক ও মুক্তি প্রদান করে থাকেন।
“মুক্তিলাভ করার জন্য নতজানু হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা কর। কখনও এমন ভেবো না যে, তোমার প্রার্থনা বিফল হবে, কেননা তিনি অনন্ত করুণায় পরিপূর্ণ।
“সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তান্ত্রিক এবং বেদান্তবাদী—অধ্যাত্মজগতে উভয়েরই লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।”১৬
স্বামী সারদানন্দজী তন্ত্রসাধনার উৎস ও সাধনপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃতভাবে আলোচনাও করেছেন এই প্রবন্ধে : “তন্ত্রের শিক্ষা বেদান্তের থেকে পৃথক কখনই নয়। শক্তির উপাসনা যে বৈদিক যুগ থেকেই হয়ে আসছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। তলবকারোপনিষদে বর্ণিত আছে, দেবতারা যখন ইন্দ্রিয়রূপী অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে মদমত্ত হয়ে উঠেছিলেন, এই দেবীই তখন উমা হৈমবতীর অপরূপ রূপধারণ করে দেবতাদের প্রমাদের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং দেবরাজ ইন্দ্রকে জ্ঞানের মার্গদর্শন প্রদান করেছিলেন।…
“বর্তমান আমাদের এই যুগে বৈদিক ক্রিয়াদি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। অপরপক্ষে বৈদিক সংহিতাভাগ এবং ব্রাহ্মণভাগ উভয়েরই অন্তর্গত কর্মকাণ্ডের সংমিশ্রণ ঘটেছে তন্ত্রে। উপাস্যের বিভিন্ন রূপে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পূজনের উপযোগী বিশেষ মন্ত্র এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া—এ-সমস্তই তন্ত্রে পাওয়া যাবে। গৃহস্থ ও সন্ন্যাসীদের জন্য ভিন্নপ্রকার উপাসনা-পদ্ধতি বিষয়ক আলোচনাও করা হয়েছে এখানে। কিন্তু তন্ত্রের সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এখানে মুক্তিকামী সাধনবর্গের প্রত্যেকের জন্য পৃথক উপাসনা ও পূজাপদ্ধতির বিধিব্যবস্থা নির্দিষ্ট হয়েছে।… এই যুগেও এমন অনেক তান্ত্রিক গুরু বর্তমান, যাঁরা শিষ্যবর্গের প্রবৃত্তি অনুযায়ী তাদের কারও জন্য বৈষ্ণবীয় বা অন্যান্যের প্রতি অপরাপর সাধনপদ্ধতির উপদেশ দান করে থাকেন।”১৭
“তন্ত্র বিধান দেয় যে, স্ত্রী-পুরুষ, ব্রাহ্মণ-শূদ্র নির্বিশেষে সকলেরই সংসারত্যাগ করে গৈরিক ধারণ করার অধিকার আছে। কিন্তু যথাযথভাবে এই গৈরিকবস্ত্র পরিধান করার জন্য প্রয়োজন সাধকের মনের প্রস্তুতি এবং দীর্ঘকালব্যাপী পূজা ও ভক্তিসাধন এই মানস-শুদ্ধির উপায় হিসাবে নির্দিষ্ট হয়েছে।”১৮
“তন্ত্রের আর-একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এখানে মানবের মাতৃস্বরূপা নারীজাতির প্রতি অবজ্ঞার দৃষ্টি প্রদর্শন না করে স্ত্রীজাতির উত্তরণ সাধিত হয়েছে এক অনন্য শ্রদ্ধার ভূমিতে। নারীর ইহজীবনের প্রাপ্তব্য প্রেম ও শ্রদ্ধার অংশটুকু তাঁকে প্রদান করা অবশ্যকর্তব্য বলে তন্ত্রে নির্দিষ্ট হয়েছে। দেবী স্ত্রীমূর্তিতে আবির্ভূতা এবং স্ত্রীজাতির ক্ষমতা এমন যে, পুরুষকে তাঁরা দেবতার স্তরে উন্নীত করে দিতে সক্ষম। স্ত্রীজাতির সকাশে তাই শ্রদ্ধাবশত চিত্তে সম্ভ্রমের সঙ্গে আত্মনিবেদন করাই বিধেয়, তার বিপরীত ভাবাপন্ন হয়ে নয়। স্ত্রীজাতি মাত্রই দিব্যশক্তির বিশেষ প্রকাশরূপে পূজনীয়া। তান্ত্রিকেরা তাই অবনত-মস্তকে স্ত্রীরূপ প্রত্যেক নারীকে শক্তিরূপে পূজা করে থাকেন, কেননা দিব্যশক্তির প্রকাশ স্ত্রীমূর্তিতেই সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়।… পবিত্র ও পূতচরিত্রের অধিকারী হয়ে মায়ের ইচ্ছার বিশুদ্ধ স্রোতে জীবন ও চিন্তনের তরণী ভাসিয়ে সানন্দবিহারে মগ্ন হয়ে থাকাই হচ্ছে দেবী-আরাধনার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।”১৯
স্বামী সারদানন্দজীর এই দীর্ঘ উদ্ধৃতি দেওয়ার একমাত্র কারণ—তন্ত্রশাস্ত্রে বর্ণিত তন্ত্রতত্ত্ব ও তন্ত্রসাধনার সবকিছুর নির্যাস এতে রয়েছে। এই লেখার প্রারম্ভে তন্ত্র সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে তা শ্রীরামকৃষ্ণের তন্ত্রসাধনায় যেমন পরিলক্ষিত হয়, তেমনি স্বামী সারদানন্দজীর তন্ত্রসাধনা ও সিদ্ধিতে তারই পুনরাবৃত্তি দেখি। স্বামী সারদানন্দজীর মনে তন্ত্রসাধনার অভিলাষ নিশ্চয় হয়েছিল উক্ত প্রবন্ধটি লেখার পর। তিনি তন্ত্রসাধনায় আরো কৌতূহলী হন কাশ্মীরে স্বামী বিবেকানন্দের মতো আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষকে এক তান্ত্রিক ফকিরের অভিশাপের ফল জেনে।
স্বামী সারদানন্দজী নিষ্ঠাবান শাক্ত পরিবারে জাত। আবার তাঁর পিতৃব্য ঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তী (শশী মহারাজের পিতা) প্রসিদ্ধ সিদ্ধ কৌল ও সুবিখ্যাত তন্ত্রসাধক জগন্মোহন তর্কালঙ্কারের শিষ্য। স্বামী সারদানন্দজীর তন্ত্রসাধনার আকাঙ্ক্ষার কথা জানতে পারা যায় ১৮৯৮ সালের ২৯ জুলাই স্বামীজী-শিষ্যা ওলি বুলকে লেখা একটি চিঠিতে—“I have been feeling the Mother worship so much these days.”২০
১৮৯৯ সালের ১৩ অক্টোবর পিতৃব্যের সঙ্গে স্বামী সারদানন্দজী মঠে শ্রীশ্রীমঙ্গলচণ্ডীর আরাধনা এবং পরে দুর্গাসপ্তশতী যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন।২১ এরপর তিনি প্রচারকার্যে ঢাকা ও বরিশালে যান। মঠে ফেরেন ১৯০০ সালের ১৩ জানুয়ারি। তারপরেই তন্ত্রসাধনার জন্য পিতৃব্য ঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তীর শরণাপন্ন হন। সেসময়ে ঈশ্বরচন্দ্র তন্ত্রসমাজে সমাদৃত ও বহুমানিত। তিনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘকাল তন্ত্রসাধনায় ডুবে থাকতেন। কালীঘাটে তিনি মা জগদম্বার দর্শন পেয়েছিলেন। স্বামী সারদানন্দজী তাঁর কাছে নিজের মনোভাব জানান। তখন ঈশ্বরচন্দ্র বলেন—যথাবিধি পূর্ণাভিষিক্ত না হলে তন্ত্রসাধনা করা যায় না, তন্ত্ররহস্য জানা যায় না। এটি তন্ত্রশাস্ত্রের বিধি। স্বামী সারদানন্দজী রাজি হন।২২
সেসময়ে স্বামীজী বিদেশে। তন্ত্রসাধনার জন্য স্বামী সারদানন্দজী সংঘাধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রীমা সারদাদেবীর অনুমতি ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। শ্রীমাও অনুমতি দেন। একই সময়ে যোগীন-মাও অভিষিক্তা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। স্বামী সারদানন্দজীর পিতা-মাতাও সন্ন্যাসিপুত্রের অভিলাষে পূর্ণ সম্মতি দেন। স্বামী সারদানন্দজীর ডায়েরিতে লেখা আছে—“কার্তিক-কৃষ্ণা-চতুর্দ্দশী। সন ১৩০৭ সাল, ইং ১৯০০ খৃঃ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ইং ১৯ শে নভেম্বর—অধিবাস, গণেশপূজা ও শ্রাদ্ধাদি। ৫ই অগ্রহায়ণ, ইং ২০ নভেম্বর, মঙ্গলবার… রাত্রে অভিষেক।” স্বামী সারদানন্দজী সাধন-সমুদ্রে ডুব দিলেন। তিনি কখনো কালীঘাটে, কখনো নিজ পিত্রালয়ে, কখনো কোনো বিশিষ্ট ভক্তের ভবনে ধ্যান, জপ ও আনুষ্ঠানিক ক্রিয়ায় নিমগ্ন থাকতেন।২৩
শ্রীরামকৃষ্ণের কৃপায়, নিজ নিষ্ঠা ও প্রবল অনুরাগে স্বামী সারদানন্দজী অচিরেই তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। ঠিক এর দুবছর পর (১৯০২) তিনি তাঁর তন্ত্রসাধনার অনুভূতিগুলি লিপিবদ্ধ করেন ভারতে শক্তিপূজা গ্রন্থে। ‘উৎসর্গ’ পত্রে তিনি লিখেছেন : “যাঁহাদের করুণাপাঙ্গে গ্রন্থকার জগতের যাবতীয় নারীমূর্তির ভিতর শ্রীশ্রীজগদম্বার বিশেষ শক্তিপ্রকাশ উপলব্ধি করিয়া ধন্য হইয়াছে তাঁহাদেরই শ্রীপাদপদ্মে এই পুস্তিকাখানি ভক্তিপূর্ণচিত্তে অর্পিত হইল।”২৪
এই গ্রন্থের প্রতিটি ছত্রে বিবৃত হয়েছে স্বামী সারদানন্দজীর তন্ত্রসাধনার পথ ও প্রত্যক্ষানুভূতি, যা তিনি চার বছর পূর্বে ‘ব্রহ্মবাদিন’ পত্রিকায় তন্ত্রশাস্ত্র মথিত করে ‘তন্ত্র বা শক্তিপূজা’ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। আশ্চর্যের কথা, তাঁর তন্ত্রসাধনার বিস্তৃত বিবরণ কোনো গ্রন্থে নেই। তবে ভারতে শক্তিপূজাতে তাঁর কয়েকটি সাধনা-ঝলক পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হলো—
১. সাধকের মনে সম্পূর্ণ অনুরাগ
২. নিষ্ঠা, ভাবের ঘরে চুরি না করা উচ্ছৃঙ্খলতা, অসত্য পরিহার
৩. সম্পূর্ণ স্বার্থত্যাগ
৪. শ্রদ্ধার সঙ্গে আবাহন, পূজা ও আত্মবলিদান
৫. শক্তিকে প্রসন্ন করা
৬. বহুকালব্যাপী চেষ্টা, ধ্যান ও একাগ্রতা
৭. সাধক হবে ‘আশিষ্ঠো দ্রঢ়িষ্ঠো বলিষ্ঠঃ’
৮. পবিত্রভাবে শ্রদ্ধা সম্পন্ন হওয়া
৯. ত্যাগ, তপস্যা, ব্রহ্মচর্য ও একাঙ্গী ভক্তিপ্রেম।২৫
১৮৬১—৬৩ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ যে শুদ্ধ তন্ত্রসাধনা করে জগদ্বাসীর কাছে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, প্রায় উনচল্লিশ বছর পরে স্বামী সারদানন্দজী সেই তন্ত্রসাধনা করে আধুনিক তন্ত্রসাধকদের কাছে আবার তার সত্যতা প্রমাণ করে দিলেন। তন্ত্রসাধনার পর স্বামী সারদানন্দজী তাঁর উপলব্ধি সহায়ে তন্ত্ররহস্য উন্মোচিত করেছিলেন আর্থার অ্যাভেলন-রচিত Principles of Tantra এবং Tantra of the Great Liberation বই-দুটির সমালোচনায়। সেগুলি প্রকাশিত হয়েছিল ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ ও ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায়। সমালোচনাগুলিতে তিনি তন্ত্ররহস্যে নিজস্ব অভিমত দিয়েছেন আর রয়েছে ‘রামকৃষ্ণানুসারী সমন্বয় আলোকে তন্ত্রশাস্ত্র-এ’ নিজের দৃষ্টিভঙ্গি।২৬
স্বামী সারদানন্দজীর ডায়েরিতে তাঁর জগন্মাতা দর্শনের কথা উল্লেখ আছে। সারদানন্দ চরিত-এ রয়েছে, তিনি ১২ ডিসেম্বর ১৯২৩ থেকে পরবর্তী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘন ঘন জগন্মাতার দর্শনলাভ করে আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন। ২৫ জানুয়ারি—‘7th day special communion, repeating of Darshan’, ৯ ফেব্রুয়ারি—‘2nd C. (communion) Massage’, ১০ ফেব্রুয়ারি—‘Intense C touching centre massage’, ১৯ ফেব্রুয়ারি—‘C. You are in me’।২৭
সুদীর্ঘ প্রায় একুশ বছর ধরে ‘জ্যান্ত দুর্গা’ শ্রীমাকে আরাধনা করেছিলেন স্বামী সারদানন্দজী তাঁর তন্ত্রসাধনার উপলব্ধি দিয়ে। শ্রীরামকৃষ্ণের মাতৃশক্তির পূর্ণাহুতি দিলেন স্বামী সারদানন্দজী তাঁর তন্ত্রসাধনার অনুভূতিজাত মাতৃশক্তিপূজায়। শুধু তাই নয়, তিনি সকল বাধা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছজ্ঞান করে জীবনভোর সকল নারীকে প্রত্যক্ষ দেবীজ্ঞানে আরাধনা করে অমর হয়ে রইলেন রামকৃষ্ণ সংঘে। এখানেই স্বামী সারদানন্দজীর তন্ত্রসাধনা সার্থক।
দাঁড়িয়ে : স্বামী সুবোধানন্দ,স্বামী বিরজানন্দ, স্বামীনির্মলানন্দ (ডানদিক থেকে)
তথ্যসূত্র
১. দ্রঃ Bhattacharyya, Haridas, The Cultural Heritage of India, The Ramakrishna Mission Institute of Culture, Calcutta, 1975, vol. IV, pp. 211-212
২. দ্রঃ Ibid., p. 212
৩. ৩ দ্রঃ Ibid., p. 213
৪. ৪ দাস, উপেন্দ্রকুমার, শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, কলকাতা, ২০১০, ১ম খণ্ড, ভূমিকা, পৃঃ ২৪
কয়েকটি নমুনা শ্লোক :
‘সাব্রবীদহং ব্রহ্মস্বরূপিণী’—দেব্যুপনিষৎ, মন্ত্র ১
“আদ্যাশক্তি মহাকালী দেবনির্মাণকারিণী”—নির্বাণতন্ত্র, ১০ম পটল
“আদ্যা শ্রীনির্গুণা কালী বাচ্যাতীতা পরাৎপরা”—শক্তিসঙ্গমতন্ত্র কা খ, ১/১০৫
(শাস্ত্রমূলক ভারতীয় শক্তিসাধনা, পৃঃ ৩৫০, ৩৫১)
৫. দ্রঃ ঐ, পৃঃ ১০—১৭
৬. দ্রঃ ব্রহ্মচারী প্রকাশচন্দ্র, স্বামী সারদানন্দ (জীবন কথা), বসুমতী সাহিত্য মন্দির, কলিকাতা, ১৯৩৬, পৃঃ ৩১ [এর পর শুধু স্বামী সারদানন্দ]
৭. দ্রঃ ঐ, পৃঃ ৩১-৩২
৮. দ্রঃ স্বামী সারদানন্দ, ‘সাধকভাব’, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলিকাতা, ১৩৮৩, ১ম ভাগ, পৃঃ ২১০-১১
৯. ঐ, পৃঃ ২১১
১০. ঐ, পৃঃ ২১৫
১১. দ্রঃ স্বামী গম্ভীরানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ-ভক্তমালিকা, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৯২, ১ম ভাগ, পৃঃ ৩০৬-৩০৭
১২. দ্রঃ স্বামী প্রভানন্দ, সারদানন্দ চরিত, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৬, পৃঃ ২৪৩
১৩. স্বামী সারদানন্দ, ‘তন্ত্র অথবা শক্তিপূজা’, স্বামী সারদানন্দ : এক অনন্য জীবন, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৮, পৃঃ ৯৮১-৮২
১৪. ঐ, পৃঃ ৯৮৩
১৫. ঐ, পৃঃ ৯৮৪-৮৫
১৬. ঐ, পৃঃ ৯৮৫
১৭. ঐ, পৃঃ ৯৮৬-৮৭
১৮. ঐ, পৃঃ ৯৮৭
১৯. ঐ, পৃঃ ৯৮৮-৮৯
২০. সারদানন্দ চরিত, পৃঃ ২৪৩
২১. দ্রঃ স্বামী সারদানন্দ, পৃঃ ১৩৬
২২. দ্রঃ ঐ, ১৩৬—৩৯
২৩. ঐ, পৃঃ ১৩৯; সারদানন্দ চরিত, পৃঃ ২৪৩। এই দুটি বইতে স্বামী সারদানন্দজীর পূর্ণাভিষেকের তারিখ ১৯০০ সালের ২০ নভেম্বর। আবার সারদানন্দ চরিত পুস্তকে তাঁর পূর্ণাভিষেকের তারিখ শুধু ১৮৯৯ সাল। (পৃঃ ২৮৪) কিন্তু ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্য তাঁর স্মৃতিকথায় অন্য কথা লিখেছেন : “তিনি স্বামীজির নির্দেশানুযায়ী বিশিষ্ট তান্ত্রিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করতে দ্রুত সাধনমার্গে অগ্রসর হইয়াছিলেন…।” (স্বামী চেতনানন্দ (সংকলক ও সম্পাদক), স্বামী সারদানন্দের স্মৃতিকথা , উদ্বোধন কার্যালয়, ২০২২, পৃঃ ২৫) স্বামীজী বিদেশ থেকে বেলুড় মঠে ফিরে আসেন ১৯০০ সালের ৯ ডিসেম্বর (স্বামী গম্ভীরানন্দ, যুগনায়ক বিবেকানন্দ, ১ম সং, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯২)। সুতরাং স্বামী সারদানন্দজীর পূর্ণাভিষেকের সাল ১৯০০ হওয়া উচিত।
২৪. স্বামী সারদানন্দ, ভারতে শক্তিপূজা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৮, ‘উৎসর্গ’
২৫. দ্রঃ ঐ, পৃঃ (৩), (৫), (৬), ১০, ১১, ২৩, ৩৫, ৩৬, ৩৮, ৮৮
২৬. দ্রঃ সারদানন্দ চরিত, পৃঃ ২৪৪
২৭. দ্রঃ ঐ, পৃঃ ২৪৫-২৪৬
‘স্বামী আত্মস্থানন্দ স্মারক রচনা’রূপে এটি প্রকাশিত হলো।
রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অছি পরিষদ ও পরিচালন সমিতির সদস্য এবং অধ্যক্ষ,
রামকৃষ্ণ মঠ (যোগোদ্যান), কাঁকুড়গাছি