দুঃখ এমন এক অনুভূতি যা আমাদের জীবনের সহিত নিবিড়ভাবে যুক্ত। দুঃখের মধ্যে চলিতে চলিতে আমরা বারবার উদ্বিগ্ন হই, সুখের প্রত্যাশায় আমাদের মন অসন্তোষে আবদ্ধ হয়। দৈনন্দিন জীবনে এই সুখ-দুঃখের লীলায় দুঃখের ভাগই বেশি। বহু দুঃখের তপস্যায় যেন আনন্দ-স্বরূপ জয় আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়। প্রকৃতপক্ষে দুঃখ দিয়া যেন এই সংসার গড়িয়া উঠিয়াছে।
আমাদের সকলের জীবনে দুঃখ বারবার বিভিন্নভাবে আসিয়া উপস্থিত হইতেছে। কর্মক্ষেত্র বা ব্যক্তিগত সম্পর্কই হউক বা অন্য কোথাও, আমাদের প্রতি নানান আঘাত আসিবেই। এই আঘাত হইতেই আমরা দুঃখকে অনুভব করি। আত্মীয়-বন্ধুর নিকট হইতে আঘাত পাইলে তাহা আরো তীব্র হয়। দীর্ঘদিন ধরিয়া এই অবস্থার মধ্যে চলিতে চলিতে আমরা উদ্বিগ্ন হইয়া উঠি। জীবন অসন্তোষে ভরিয়া ওঠে। ছটফট করিতে থাকি এই দুঃখ-যন্ত্রণার পরিস্থিতি হইতে বাহিরে আসিতে, কিন্তু তাহার উপায় বড়ই কম!
এমতাবস্থায় আমাদের কী করণীয়, এপ্রসঙ্গে শাস্ত্রীয় অভিজ্ঞান হইল—দুঃখকে হাসিমুখে সহ্য করা। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বাণীতে একই উচ্চারণ—“শ, ষ, স—তিনটে স। যে সয় সেই রয়।” শাস্ত্রে এই অভিধাকে বলা হয় ‘তিতিক্ষা’—যাহার অর্থ হইল ‘সহ্যশক্তি’, যেখানে প্রতিকার নাই সেইখানে হাসিমুখে সহ্য করাই একমাত্র কাজ। বিবেকচূড়ামণিতে তিতিক্ষার সংজ্ঞা রহিয়াছে—“সহনং সর্বদুঃখানামপ্রতীকারপূর্বকম্।/ চিন্তাবিলাপরহিতং সা তিতিক্ষা নিগদ্যতে।।”—প্রতিকারের চেষ্টা না করিয়া সব দুঃখ সহ্য করিয়া যাওয়া এবং সেইসঙ্গে দুশ্চিন্তা ও বিলাপ-মুক্ত থাকাকেই তিতিক্ষা বলা হয়।
বিবিধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়া আমাদের চলিতে হয়, অভিজ্ঞতা হয় রকমারি। তাহার অধিকাংশই অনভিপ্রেত, অপ্রীতিকর ও দুঃখজনক। এইসব অভিজ্ঞতা যে-দুঃখ লইয়া আসে তাহা মূলত শারীরিক বা মানসিক স্তরে কাজ করিয়া থাকে। সমস্যার মাঝে সব দুঃখ-কষ্ট সহন করিয়া স্থির থাকাকেই তিতিক্ষা বলা হয়। এই তিতিক্ষার দুইটি শর্ত, প্রথমত—জীবনের নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া যে দুঃখ-কষ্ট আসে তাহার প্রতিকার-ভাবনায় চঞ্চল না হওয়া, আর দ্বিতীয়ত—সহ্য করিতে গিয়া কোনোরকম দুশ্চিন্তা ও বিলাপ না করা। কিন্তু কার্যত তাহা আমাদের জীবনে দেখিতে পাই না। সাধারণত দুঃখজনক পরিস্থিতিতে আমরা বেশি চঞ্চল হই, দোষারোপ করি; নিজের শক্তি দিয়া সেই পরিস্থিতিকে, অন্যায়কে, অপমানকে তথা দুঃখকে বদলাইতে যাই। একটা আঘাতের বদলা লইতে আমরা আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি করিয়া ফেলি। ভগবান বুদ্ধ বলিয়া গিয়াছেন : “আঘাতের পরিবর্তে আঘাত করিলে সেই আঘাতের কোনো প্রতিকার হইল না, উহাতে কেবল জগতে একটি পাপের বৃদ্ধিমাত্র হইবে।” আমরা দুঃখকে কমাইবার জন্য বাহিরের পরিস্থিতিকে পালটাইতে বা নিয়ন্ত্রণ করিতে চাই। মনে হয় তাহাই সহজ নিদান। কিন্তু কার্যত দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাহা সময় ও শক্তির অপচয় হইয়া দাঁড়ায়। অনেক সময়ই পরিস্থিতির উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ভারতবর্ষ তাই উপায় দিয়াছে—তিতিক্ষা অর্জন, যাহা গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যাত্ম-সাধনা।
তিতিক্ষার সাধনা ভারতের নিজস্ব। এই সাধনা কঠিন কিন্তু সম্ভব। ক্ষমা যেমন মহৎ গুণ—কেননা যাহার ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমা করিতে পারে, তেমনি তিতিক্ষা একটি কঠিন সাধনা—যাহার সহনশীলতা আছে, সেই একমাত্র সহ্য করিতে পারে। তিতিক্ষা অভ্যাস-সাপেক্ষ। শারীরিক এবং মানসিক দুই স্তরেই ইহার অভ্যাস করা যায়।
স্বামী তুরীয়ানন্দজী কাশী সেবাশ্রমে রহিয়াছেন। একদিন গীতাপাঠ চলিতেছে। উপস্থিত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ সেদিনকার অত্যধিক গরমের কথা উল্লেখ করিলেন। হরি মহারাজ গীতার “মাত্রাস্পর্শাস্তু কৌন্তেয় শীতোষ্ণসুখদুঃখদাঃ৷/ আগমাপায়িনোনিত্যাস্তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত।।”—এই শ্লোকটির কথা উল্লেখ করিয়া বলিলেন যে, দুঃখ হইবে না—এমন কথা শ্রীকৃষ্ণ বলেন নাই, বরং বলিয়াছেন সেই দুঃখকে সহ্য করিতে হইবে—‘তাংস্তিতিক্ষস্ব ভারত’। ইন্দ্রিয়ের সহিত বিষয়ের সংযোগ হইলেই সুখ-দুঃখ হইবে। তাহারা চিরস্থায়ী নহে, চলিয়া যাইবে, সুতরাং তাহাদিগকে সহ্য করাই শ্রেয়। শীত-গ্রীষ্ম, ঠাণ্ডা-গরম, শরীরের রোগজ্বালা ইত্যাদি আসিয়াই থাকে, এগুলি যতদূর পারা যায় সহ্য করিবার চেষ্টা করিতে হইবে। অসুখ হইলে ডাক্তারের নিকট যাইতে হইবে, তাহার নির্দেশ অনুযায়ী পথ্য ও ঔষধ লইতে হইবে। সেইসঙ্গে শরীরের কষ্টটুকু সহ্য করা দরকার। সহ্য করার মাধ্যমে মনের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
তুরীয়ানন্দজী মহারাজ বলিতেন : “গোড়ায় গোড়ায় সহ্য অভ্যাস করা আবশ্যক, তা না হলে কষ্টের সীমা থাকবে না।” তাঁহার নিজের জীবনের ঘটনা। তিনি একবার উজ্জয়িনীতে ছিলেন, খুব গরম চলিতেছে তখন। দ্বিপ্রহরের রৌদ্রে যখন কেহ বাহিরে যায় না, তখন তাঁহার বাহিরে বেড়াইবার ইচ্ছা হইল। বাহির হইয়া কিছুদূর যাইবার পর তীব্র গরমে তাঁহার পায়ে ফোসকা পড়িল। তিনি কিন্তু দমিলেন না, সহ্য করিয়া চলিতে লাগিলেন। অকস্মাৎ এক ভক্ত দোকানদার ছুটিয়া আসিয়া তাঁহার পায়ে ধরিলেন এবং মহারাজকে নিজ দোকানে লইয়া গিয়া শরবত খাওয়াইলেন। এপ্রসঙ্গে স্বামী তুরীয়ানন্দজী পরে বলিয়াছিলেন : “ঠিক ঠিক নিষ্কিঞ্চনভাব এলে তিনি রক্ষা করেন—তাঁর হাত অনুভব হয়।”
পৃথিবীতে নিন্দা-মন্দ, অন্যায়-অবিচার, দুঃখ-কষ্ট যাঁহারা অবাধে অসংকোচে গ্রহণ করিতে পারেন, তাঁহারাই তো শক্তিশালী। শ্রীশ্রীমায়ের বাণীতে রহিয়াছে—“পৃথিবীর মতো সহ্যগুণ চাই। পৃথিবীর উপর কত রকমের অত্যাচার হচ্ছে, অবাধে সবই সইছে, মানুষের সেইরকম চাই।” শ্রীশ্রীমায়ের জীবন অনুসরণ করিলে আমরা দেখিব, তিনি স্বয়ং তিতিক্ষা-মূর্তি ধারণ করিয়া এই মর্তধামে অবস্থান করিয়াছেন। দক্ষিণেশ্বরে তাঁহার চৌদ্দ বছরের নিভৃতবাসের কথা স্বল্পালোচিত। ত্যাগ, সেবা ও তিতিক্ষাই এইসময় তাঁহার প্রধান সাধনা ছিল। তিনি বলিতেন : “সন্তোষের সমান ধন নেই, আর সহ্যের সমান গুণ নেই।” শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগের পর অন্ন-বস্ত্রের কষ্ট আর সমস্ত প্রতিকূলতা তিনি সহন করিয়াছেন। চারিপার্শ্বের শত ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট আর আত্মীয়-স্বজনদের দুর্ঘট আচরণকে তিতিক্ষা-গুণে জয় করিয়া স্থির-অচঞ্চল রহিয়াছেন। তাঁহার এই সহ্যশক্তির প্রসঙ্গেই পরবর্তিকালে স্বামী সারদানন্দজী বলিয়াছেন : “আমাদের তো দেখছ—পান থেকে চুন খসলে আমরা চটে আগুন হই। কিন্তু মাকে দেখ। তাঁর ভায়েরা কি কাণ্ডই করেছেন; অথচ তিনি যেমন তেমনটিই আছেন—ধীরস্থির!” বস্তুতপক্ষে ভারতবর্ষে মানুষ ত্যাগের দ্বারা, দানের দ্বারা, তপস্যার দ্বারা, দুঃখের দ্বারা নিজেকে গভীরভাবে প্রকাশ করিয়াছে। তেমন একজন ঐতিহাসিক চরিত্র হইলেন সীতা। স্বামীজী তাঁহার ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছেন—যিনি নিত্য পবিত্রতার শ্রেষ্ঠ মূর্তি, সেই শ্রেষ্ঠত্ব তিনি অর্জন করিয়াছেন সহিষ্ণুতা দিয়া। তিনি এত দুঃখ সহ্য করিয়াছেন, কিন্তু তাহার পরেও শান্ত থাকিয়াছেন সর্বদা। রাম কর্তৃক যখন বনবাসের নির্দেশ আসিয়াছে, তখনো তিনি বিন্দুমাত্র চঞ্চল হন নাই। এ তিতিক্ষারই সাধনা। এই ‘তিতিক্ষা’ ভারতের জাতীয় শক্তি।
স্বামী বিবেকানন্দের কথায়—“ভারতবাসী বলেন, দুঃখ-কষ্ট সহ্য করিয়া আমরা উহাকে নষ্ট করিবার চেষ্টা করিতেছি। এইরূপ সহ্য করিতে করিতে আমাদের পক্ষে দুঃখ বলিয়া আর কিছু থাকিবে না, উহাই আমাদের পরম সুখ হইয়া দাঁড়াইবে।” মনে করুন কেউ আমাদের গালমন্দ করিতেছে, কিন্তু আমরা তাহা গায়েই লইতেছি না, বরং শান্ত ও প্রসন্নতা বজায় রাখিয়া স্মিতহাস্য মুখে সেই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করিলাম। এতে আমাদের বাহিরের প্রসন্নতা বজায় থাকিল কিন্তু মনের শান্তি বা স্থিরতা যদি এতে ভঙ্গ হয়, তাহা হইলে অসন্তোষের জন্ম হইবে। সারাক্ষণ ঐ অসন্তোষ মনের মধ্যে উঠিবে এবং যথোচিত উত্তর দিতে না পারিবার জন্য মন অতিষ্ঠ হইয়া উঠিবে। এতে আমরা নিজেদের মনের কাছে শান্তিভঙ্গকারী হইয়া উঠি। কিন্তু ঐ অপমান যদি আমরা প্রকৃতপক্ষে সহ্য করিয়া ফেলিতে পারি, ব্যাপারটা সহজেই ভুলিয়া যাই যদি, তাহা হইলেই মনটা শান্ত সুখী থাকিবে এবং অন্তরের শক্তি বাড়িবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় : “পৃথিবীর নিন্দা অবিচার দুঃখকষ্টকে যারা অবাধে অসংকোচে গ্রহণ করতে পারে তারা কেবল বলিষ্ঠ হয় তা নয় তারা নির্মল হয়, অনাবৃত জীবনের উপর দিয়ে জগতের পূর্ণসংঘাত লেগে তাদের কলুষ ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে।”
তিতিক্ষা প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে এক ব্রাহ্মণের কাহিনি বলিয়াছিলেন। অবন্তী নগরীতে ধনবান, কৃপণ, লোভী এবং অত্যন্ত ক্রোধী এক ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। তাঁহার স্বভাবের কারণে আত্মীয়-স্বজন কেহই তাঁহার নিকট হইতে সুখ পাইত না। অহংকারী এই ব্রাহ্মণের সমস্ত পুণ্যকর্ম ধীরে ধীরে নষ্ট হইয়া গেল, তাঁহার ধন-সম্পদ লুপ্ত হইল। আত্মীয়-স্বজন তাঁহার অনিষ্ট করিতে শুরু করিল। সমস্ত কিছু হারাইয়া তিনি চিন্তায় জর্জরিত হইলেন। দুঃখভোগের ফলে তাঁহার মধ্যে বৈরাগ্য জন্ম লইল। অর্থ ও তাহার সহিত যুক্ত দোষগুলির কথা তিনি বিচার করিয়া বুঝিতে পারিলেন। উপলব্ধি করিলেন—মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর সহিত বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী; সুতরাং কোনো বস্তু বা ব্যক্তি হইতে প্রকৃত সুখপ্রাপ্তি অসম্ভব। তাঁহার মনে শান্তি আসিল। তাঁহার মধ্যে উৎপন্ন বৈরাগ্যকে সর্বদেবময় ভগবান হরির কৃপা বলিয়া তিনি মনে করিলেন।
বিচারশীল এই ব্রাহ্মণ বৈরাগ্যবশত সন্ন্যাস নিলেন এবং মন, ইন্দ্রিয় ও প্রাণকে সংযত করিয়া ভিক্ষুর ন্যায় এই পৃথিবীতে বিচরণ করিতে লাগিলেন। ভিক্ষার জন্য নগরে বা গ্রামে যাইলে বিভিন্ন প্রকারে সকলে তাঁহাকে উত্ত্যক্ত করিত। এই সকল দুঃখ কর্মফলে প্রাপ্ত, সুতরাং অবশ্যই ভোগ করিতে হইবে—এইপ্রকার মনে করিতেন। ঐ সকল দুঃখপ্রাপ্ত হইয়াও মনের শান্তি নষ্ট হইতে দিতেন না এবং সাধন-ভজনে রত থাকিতেন। এই সময়ে তিনি যে-গাথা গাহিয়াছিলেন তাহা ‘ভিক্ষুগীতা’ নামে পরিচিত। সেখানে তিনি বলিলেন যে, সুখ-দুঃখের হেতু কোনো ব্যক্তি, দেবতা, গ্রহ, কর্ম বা কাল কেহই নহে। যে-মনের দ্বারা সংসারচক্র পরিচালিত হয়, একমাত্র সেই মনই জীবের সুখ-দুঃখের কারণ। অহংকারের সহিত সম্পর্কবশত আত্মার সুখদুঃখাদির অনুভব হয়, বাস্তবপক্ষে আত্মা নির্বিকার—এই প্রকার যিনি অনুভব করেন তিনি কোনো প্রাণী হইতে ভয় পান না। ভিক্ষুর এই কাহিনিটির শেষে শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন—যিনি এই ভিক্ষুর দ্বারা গীত পরমাত্মনিষ্ঠার কথা নিজে শুনিয়া, অপরকে শুনাইয়া এবং অন্তরে ধারণা করিয়া ইহাতে চিত্তকে একাগ্র করিতে পারেন, তিনি আর জাগতিক দ্বন্দ্বসমূহের দ্বারা অভিভূত হন না।
প্রকৃতপক্ষে মন আত্মতত্ত্বে নিমগ্ন থাকিলে এই সকল জাগতিক দুঃখ-কষ্টে বিচলিত হইবার কোনো সুযোগ থাকিবে না। স্বামী তুরীয়ানন্দজী বলেন : “বাস্তবিক মন উচ্চাবস্থায় থাকলে দুঃখ কাহাকেও অভিভূত, দুঃখিত করতে পারে না। যে মনে দুঃখ হবে, সে মনই যখন উচ্চাবস্থায় থাকে, তখন আর কি করে তাকে দুঃখ দিবে!” মনকে এইরকম উচ্চ সুরে বাঁধিতে পারিলে তিতিক্ষা আপনা-আপনিই হইয়া যায়। গীতাপাঠের যে-প্রসঙ্গ পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি, সেইদিন হরি মহারাজ সুললিতভাবে গীতাপাঠ করিয়া সকলের মনকে এমন স্তরে লইয়া গিয়াছিলেন যে, সেই সময়ের জন্য সকলে গ্রীষ্মের উত্তাপকে ভুলিয়া গিয়াছিলেন।
আমাদের জীবন ও চারপাশ সবকিছু আজ দ্রুত পালটাইতেছে। দিন দিন জীবন কঠিন হইতে কঠিনতর হইতেছে। এই জগৎ তপস্যার জগৎ। সুখ-দুঃখের এই লীলা চলিতেছে সর্বক্ষণ—স্বামীজীর ‘সখার প্রতি’ কবিতায় তাই অবিস্মরণীয় উচ্চারণ—“যতদূর যতদূর যাও, বুদ্ধিরথে করি আরোহণ,/ এই সেই সংসার-জলধি, দুঃখ সুখ করে আবর্তন।” হৃদয়ের উদারতা আর মহত্ত্বের দ্বারা আমাদের সকল দুঃখকে তুচ্ছ করিয়া লইতে হইবে। তিতিক্ষার সাধনাকে অভ্যাসের আকারে লইয়া আসিতে হইবে আমাদের জীবন মাঝে। কবি প্রদোষকুমার পাল আমাদের তাহাই স্মরণ করাইয়া দিয়েছেন : “দুখের মাঝে সুখের আলো/ পেতেই যদি হয়/ স্মরণ করো সেই বাণীটি/ যে সয় সে রয়।…/ ভয়ের মাঝে অভয়মন্ত্র/ শুনতে যদি হয়/ স্মরণ করো সেই বাণীটি/ যে সয় সে রয়।/ অশান্ত মন শান্ত করে/ চলতে যদি হয়/ স্মরণ করো সেই বাণীটি/ যে সয় সে রয়।”