মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও রাজ্যের ক্লিবল্যান্ড শহরের এক অনাথাশ্রমে শৈশব কাটান উইলিয়াম অ্যান্টনি (বিল) ওয়াইন। মানসিক অশান্তি আর হীনমন্যতা নিয়ে ওয়াইনের কৈশোর উত্তীর্ণ হয় পথের ধারে রাস্তার কুকুরদের সঙ্গে। সেসমস্ত কুকুরের সঙ্গ ও ভালবাসায় ওয়াইন একদিন ল‌‌ক্ষ্য করেন যে, তাঁর যাবতীয় হতাশা ও হীনমন্যতার যন্ত্রণা কেটে গেছে। তার পরই ওয়াইন কলোরাডোর ডেনভার শহরে এয়ারফোর্স স্কুলে ফটো ল্যাবটেকনিসিয়ান কোর্সে ভর্তি হন। সেখানে  কিছুকাল কাটতে না কাটতেই তাঁর কানে ভেসে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। ওয়াইন সবকিছু ছেড়ে যোগ দিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে।

১৯৪৪-এ ওয়াইন হাজির হলেন নিউগিনিয়ার জঙ্গলে (অস্ট্রেলিয়া) মার্কিন সেনা ছাউনিতে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে সা‌ক্ষাৎ হয় ধূসর বর্ণের এক মহিলা কুকুরশাবকের। কুকুরটি ছিল ইয়র্কশায়ার-টেরিয়ার গোষ্ঠীর। জনৈক মার্কিন সৈনিক কুকুরটিকে সংগ্রহ করেন জঙ্গলের একটি গর্ত থেকে। কুকুরদের প্রতি ওয়াইনের অসীম মমতা। ধার্যমূল্য দিয়ে সৈনিকের কাছ থেকে কুকুরশাবকটিকে কিনে নেন ওয়াইন। তার নাম দেন ‘স্মোকি’।

এরপর শুরু হলো স্মোকির প্রশি‌ক্ষণপর্ব। ওয়াইনের প্রযত্নে ও প্রশি‌ক্ষণে মইয়ে চড়া, দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটা, উঁচু জায়গা থেকে প্যারাসুটের সাহায্যে নিচে নামা, ইংরেজি অ‌ক্ষর শনাক্ত করা—এমন বহু কাজেই স্মোকি দ‌ক্ষ হয়ে ওঠে। ক্রমে সে মার্কিন সেনাবিভাগে অপরিহার্য সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধকালে জাপানি যুদ্ধবিমানের প্রাণঘাতী মিসাইলের আক্রমণ থেকে মার্কিন সেনাদের সচেতন করে দিত সে। মার্কিন যুদ্ধবিমানের পারস্পরিক সংযোগর‌ক্ষায় মাটির ভিতর দিয়ে টেলিফোনের তার পাঠানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজও অনায়াসে হাসিল করে দিয়েছিল স্মোকি। ১৯৪৫ সালে ১৫০টি মার্কিন বায়ুসেনার অন্যতম সদস্য স্মোকি বারোটি যুদ্ধ‌ক্ষেত্রের সাক্ষী এবং আটটি ব্যাট্‌লস্টার সম্মানে ভূষিত। স্মোকিই বিশ্বে প্রথম যুদ্ধ-কুকুর। আমেরিকার অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট টেলিভিশন চ্যানেল এবং আমেরিকার কেনেল ক্লাবের তথ্যানুযায়ী স্মোকি হলো বিশ্বের প্রথম থেরাপি-কুকুর।

যুদ্ধ শেষে ওয়াইন ওহিও শহরে ফিরলে স্মোকিও থাকে তাঁর সঙ্গী হয়ে। একবার ওয়াইন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে সৈনিক হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁর শয্যার পাশে পাঁচটি বিনিদ্ররজনি কাটায় স্মোকি। যুদ্ধ‌ক্ষেত্র থেকে ফেরার পর আরো বারো বছর ধরে স্মোকি প্রায়ই হাজির হতো সৈনিক হাসপাতালে। আহত ও মানসিক বিষণ্ণতাক্লিষ্ট সৈনিকদের শয্যার পাশে গিয়ে দাঁড়াত সে। তাঁরাও তাকে আদর করতেন এবং ক্রমে তাঁরা সুস্থও হয়ে উঠতেন। যুদ্ধ শেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনিচিত্রের সুবাদে স্মোকি হয়ে ওঠে বিশ্বখ্যাত। প্রশি‌ক্ষিত স্মোকি বিয়াল্লিশটি লাইফ টেলিভিশন শো-তে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মানুষের বিনোদনের খোরাক হয়ে ওঠে। সেবাব্রতী স্মোকির জীবনাবসান ঘটে ১৯৫৭ সালে। ওহিও-র লেকভিউ বাগানের এক প্রান্তে স্মোকির মরদেহ কবরস্থ করেন ওয়াইন। ২০০৫ সালের ১১ জানুয়ারি সৈনিক দিবসে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী সুষান বাহারির উদ্যোগে স্মোকির কবরস্থানের ওপর দুই টন পরিমাণের ব্লু-গ্রানাইট পাথর দিয়ে এক সমাধিবেদি নির্মাণ করা হয় এবং তার ওপর স্থাপিত হয় সেনা হেলমেটের মধ্যে থাকা স্মোকির ব্রোঞ্জমূর্তি। এই দৃশ্য বৃদ্ধ ওয়াইনকে মুগ্ধ করে। বর্ণিত বিবরণ সংগৃহীত হয়েছে উইলিয়াম বিল ওয়াইন বিরচিত ইয়র্কি ডুডলে ড্যানডি : এ মেমোয়ার গ্রন্থ এবং স্মোকি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে।  

পোষ্যভিত্তিক থেরাপি বা ‘অ্যানিম্যাল অ্যাসিসটেড থেরাপি’ হলো মনোবিদ ও চিকিৎসাবিদদের দ্বারা পরিচালিত প্রশি‌ক্ষিত পোষ্যদের সাহায্যে মনোরোগীদের মানসিক ভার লাঘব করার প্রচেষ্টা—যা রোগী কর্তৃক পোষ্যদের প্রযত্নে বা পোষ্যদের প্রতি রোগীর আদর অভিব্যক্তি প্রকাশে বা পোষ্যদের সঙ্গে রোগীর ক্রীড়ামত্ততার মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে। এজাতীয় উদ্যোগ মনোরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্নায়বিক, সামাজিক ও শারীরবৃত্তীয় গুণাবলির উন্নতিবিধান করে। এই থেরাপির আত্মপ্রকাশ আঠারো শতকের শেষের দিকে (১৭৯৬-৯৭) ইংল্যান্ডের ইয়র্ক রিট্রিট মনোরোগ পুনর্বাসনকেন্দ্রে। উনিশ শতকে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিভিন্ন হাসপাতালে, নার্সিংহোমে এবং মনোরোগ সংশ্লিষ্ট পুনর্বাসনকেন্দ্রে পোষ্যভিত্তিক থেরাপি মনোরোগ নিরাময়ের কার্যকরী পদ‌ক্ষেপ হিসাবে গৃহীত হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আমেরিকান রেডক্রস সংস্থার পরিচালনায় প্রশি‌ক্ষণপ্রাপ্ত পোষ্যদের হাসপাতালে নিয়মিত উপস্থিতি আহত ও অসুস্থ সেনাদের দ্রুত আরোগ্যলাভে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে বিশিষ্ট মনোবিদ লিও কে. বুস্টার্ড এবং মাইকেল জে. ম্যাকুলক আমেরিকার ওরিগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ড শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ডেল্টা সোসাইটি’—যার উদ্দেশ্য হলো পোষ্যদের উপযুক্ত প্রশি‌ক্ষণ দিয়ে তাদের সাহায্যে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের আরোগ্য ঘটানো। বিশ শতকে এটি ছিল ডিমেনসিয়া, অ্যালজাইমার জাতীয় মনোরোগ-আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তি, পোস্ট ট্রম্যাটিক ট্রেস ডিসঅর্ডার-আক্রান্ত অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং অটিজম-আক্রান্ত শিশুদের মনোরোগ নিরাময়ের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে ঐ প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয় ‘পেট পার্টনার্স’। এর অধীনে বর্তমানে ১৩০০০-এর অধিক স্বেচ্ছাসেবী দল পোষ্যভিত্তিক থেরাপি সংঘঠনে ব্যস্ত এবং তারা পোষ্যপ্রাণীর সাহায্যে ত্রিশ ল‌ক্ষেরও বেশি রোগীকে পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাথি এম. কোলের মতে— “পোষ্যভিত্তিক থেরাপি মনোরোগীর শারীরিক, মানসিক ও মনোসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়ার দাবি রাখে।”

নানা ধরনের প্রাণী এই পোষ্যভিত্তিক থেরাপিতে অংশ নিতে পারে। কুকুর বহুল ব্যবহৃত পোষ্য এবং সহজে প্রশি‌ক্ষিত হওয়ার ‌ক্ষমতার অধিকারী হলেও পোষ্য হিসাবে বিড়াল (Feline assisted therapy), ঘোড়া (Equine assisted therapy), গরু (Bovine assisted therapy), ডলফিন (Dolphin assisted therapy), পাখি (Bird assisted therapy), খরগোস (Rabit assisted therapy) এই থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকার মিনিসোটা রাজ্যের ডারউইন শহরে অ্যালজাইমার ও ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের সুস্থতার উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে লেকভিউ রাঞ্চ পুনর্বাসনকেন্দ্র। সেখানে রোগীদের সাথে সময় কাটায় প্রশি‌ক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াশাবক জ্যাসমিন এবং কুকুর জ্যাক। জ্যাসমিনের লোমে ব্রাশ করা ও অন্যান্য পরিচর্যায় বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিয়মিত অঙ্গসঞ্চালন হওয়ায় তাঁদের মানসিক বিষণ্ণতা অনেকাংশে কমে আসে। ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত ৭৭ বছরের বৃদ্ধা লেরা বলেন : “জ্যাসমিন আমার মেয়ে, ওর সাথে দেখা হওয়ায় সারাদিন আমার আনন্দে কাটে।” উত্থানশক্তিরহিত ৮৭ বছরের অ্যালজাইমার-আক্রান্ত বৃদ্ধ রেত্র জ্যাকের সাথে খেলা করার উৎসাহে উঠে বসেন এবং ভাবেন যে, জ্যাকের তিনি প্রভু ও প্রশি‌ক্ষক। এই বোধেই তিনি নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। জ্যাসমিন ও জ্যাকের সহযোগিতায় বহু মনোরোগীই বিষণ্ণতা ভুলে স্বাভাবিক জীবনস্রোতে সামিল হতে পেরেছেন। ‘ওয়েস্ট জার্নাল অব নার্সিং রিসার্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী অ্যালজাইমার রোগীদের পুনর্বাসনকেন্দ্রের ডাইনিং হলের রঙিন মাছের অ্যাকোরিয়াম মনোরোগ-আক্রান্তদের মধ্যে এতটাই মুগ্ধতা সৃষ্টি করে যে, তাঁরা স্ব-ইচ্ছায় নিজেদের আহার গ্রহণ করেন এবং শরীরের প্রতি যত্ন নিতে আগ্রহী হন। অটিজম মনোব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুরা ডলফিনের সাথে সাঁতার কাটার সুযোগ পেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।গবাদি পশুদের সঙ্গে আলিঙ্গনের মাধ্যমে ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, পরার্থপরতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের প্রবণতা দেখা গেছে। নিউ ইয়র্কের গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৩৩ হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠেছে ‘মাউন্টেন হর্স ফার্ম’। সেখানে ঘোড়াদের সাথে প্রতিপালিত হয় বনি ও বেলা নামে দুই গোশাবক। স্থানীয় শিশুরা যাতে তাদের আলিঙ্গন ও আদর করার সুযোগ পায়, তার জন্য তাদের অভিভাবকগণ প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ ডলার অর্থ ব্যয় করতেও পিছপা হয় না।১০ অধুনা বেলজিয়াম, সুইৎজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডেও শুরু হয়েছে গবাদি পশুদের সঙ্গে আলিঙ্গনজনিত থেরাপি।

ওয়াশিংটন স্টেট সংশোধনাগার পরিচালিত ‘দি প্রিজন পেট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে কারাবন্দিরা পোষ্যদের প্রশি‌ক্ষণ দিয়ে মনোরোগীদের রোগনিরাময়ে কাজে লাগায়। তাতে রোগী যেমন আরোগ্যের পথ দেখে, কারাবন্দিরাও নিজেদের ভুল শুধরে সুস্থ নাগরিক হয়ে উঠছে।১১

ভারতেও এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রশি‌ক্ষিত পোষ্যদের সাহায্যে মানসিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার পরিষেবা দিয়ে চলেছে ‘অ্যানিম্যাল অ্যাঞ্জেল্স ফাউন্ডেশন’ ও ‘মানব ফাউন্ডেশন’ (মুম্বাই), ‘ওয়েগভিল্লে’ (বেঙ্গালুরু) এবং ‘ফার-বল স্টোরি’ (দিল্লি)। প্রথম ও চতুর্থ কেন্দ্রে পোষ্যপ্রাণী কুকুর, দ্বিতীয় কেন্দ্রের প্রাণী বিড়াল এবং তৃতীয় কেন্দ্রের পোষ্য হলো ঘোড়া।১২

‘জার্নাল অব সাইকোসোমাটিক রিসার্চ’ পত্রিকায় ২০০০ সালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে মনোবিদ জে. এস. ওডেন্ডাল বলেন, মনোরোগী ও পোষ্যদের পারস্পরিক সা‌ক্ষাতে তাদের উভয়ের দেহেই নিউরোকেমিক্যাল ক্ষরণে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে, যা তাদের পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কস্থাপনের সহায়ক এবং রোগীর রোগমুক্তির বড় নিদান।১৩ ম্যাসাচুসেট জেনারেল হাসপাতালের গবেষক ডাঃ লরিস এস. পাল্লের মতে—স্কিজোফ্রেনিয়া, অ্যালজাইমার, ডিমেনসিয়া, ম্যানিক ডিপ্রেশন প্রভৃতি মনোরোগ-আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে প্রশি‌ক্ষণপ্রাপ্ত প্রাণীদের নিবিড় সংযোগে তাদের দেহস্থ নিউরোট্রান্সমিটার, সেরাটোনিন ও এন্ডোরফিনের ‌ক্ষরণমাত্রা বৃদ্ধির সাথে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ও অ্যাড্রিনালিনের ‌ক্ষরণমাত্রা কমে; ফলে তাদের দেহে বিষাদময়তা ও অবসন্নতা অনেকাংশে দূরীভূত হয়।১৪ থেরাপি-কুকুরের সাথে ৫ থেকে ২০ মিনিট আলাপচারিতায় কলেজ-পড়ুয়াদের লালারসের ইমিউনোগ্লোবিনের মাত্রাবৃদ্ধি ল‌ক্ষিত হয়, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনাক্রম্যতার সহায়ক হয়।১৫ ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, পোষ্যভিত্তিক থেরাপি হৃদ্‌রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় বিশেষ ফলদায়ী। থেরাপি-কুকুরের সাথে ১২ মিনিট আলাপচারিতায় প্লাজমায় অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা ১৭ শতাংশ কম হয়, বাম অলিন্দের রক্তচাপ ১০ শতাংশ এবং ফুসফুসীয় ধমনির রক্তচাপ ৫ শতাংশ প্রশমিত করে; ফলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগজনিত উদ্বেগ ২৪ শতাংশ কমে।১৬ ৮ মে ২০২১ ‘এই সময়’ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ফিচারে উল্লেখ আছে—“হু বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগ্যানাইজেশন-এর হিসাব অনুযায়ী ১৫০ মিনিটের হালকা শারীরিক পরিশ্রমে যা লাভ হয়, কুকুরের সঙ্গে দুবেলা হাঁটাহাঁটি করলে একই ফল পাওয়া যায়।”আরেকটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, সারমেয়দের প্রতি সহমর্মিতা ও যত্নপ্রবণ মানসিকতা মনোরোগীর দেহে অক্সিটোসিন ও প্রোল্যাকটিন ‌ক্ষরণমাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা ক্রোধ সংবরণ ও আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগী স্বাভাবিক জীবনছন্দের অধিকারী হতে পারে।১৭

বস্তুত, মনোরোগ নিরাময়ে পোষ্যপ্রাণীদের বিশেষ ভূমিকা এবং তা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান কর্তৃক সমর্থিত হওয়ায় পোষ্যপ্রাণীদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও সমবেদনা বিশেষ উদ্দীপনায় সঞ্জীবিত হয়। মনোরোগ- বিধ্বস্ত ব্যক্তিদের আলোর পথ দেখানোয় প্রাণী-প্রতিনিধি স্মোকি, জ্যাসমিন, জ্যাক, বনি ও বেলার নিরলস প্রয়াস দেখে বিশ্বের মানুষ অভিভূত। সমগ্র মানবজাতি তাদের প্রতি জানায় সহস্র কুর্নিশ। পরিশেষে জানাই, বিশ্বের প্রথম থেরাপি-কুকুর স্মোকির প্রভু উইলিয়াম বিল ওয়াইন প্রয়াত হয়েছেন ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল।১৮ এই নিবন্ধ বিশ্বের সমস্ত পশুপ্রেমীর হয়ে বিল ওয়াইনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

তথ্যসূত্র

১   (ক) Wynne, William A, Yorkie Doodle Dandy: A Memoir, (ISBN-0-9652254-0-2) Smoky war Dog, LLC, March 2017

     (খ) https://en.wikipedia.org/wiki/smoky_(dog)

     (গ) www.warhistoryonline.com.May 13,2017

     (ঘ) https://en.wikipedia.org/wiki/Bill_wynne

২   Bruch, Mary R., ‘Volunteering with your Pet : How to get involved in Animal—Assissted Therapy with Any kind of Pet’ (ISBN-08076057911), Howell Book House, 1996, pp. 3—8

৩   Beck, Alan M., and Aaron Katcher, ‘Between Pets and People: The importance of Animal companionship’, (ISBN1557530777), Purdue University Press, 1996

৪   ILAR Journal, 2010, 51(3); pp. 199—207

৫   American Heart Association, Abstract—2513, 15 November 2005

৬   Memory Moments—Animal Assisted Therapy for those with Dementia, 31 May 2013 (video link:https://youtube.com/watch? v=E73HHONExvs)

৭   Current Gerontology and Geriatrics Research, 2014 (November) pp. 1—9

৮   https://www.dolphin—world.com/dolphin-assisted-therapy (25 April 2017)

৯   Journal of Education and Social Sciences, 2016, 5(3): pp. 40—46

১০  Chandler, Nathan, ‘A Moo—ving New Therapy: Cuddle up to a cow’, 14 August 2019 (www.howstuffworks.com)

১১  Damron, W. Stephen, ‘Introduction to Animal Science’, (ISBN-9780132623896), Pearson Education Inc., 2013

১২  Mukherjee, Anushka, ‘Four Centres that Bring Mental Health to the Fore Using Animal Assisted Therapy’, 19 April 2019. (www.homergrown.co.in)

১৩  Journal of Psychosomatic Research, 2000, 49(4) : pp. 275—280

১৪  ILAR Journal, 2010

১৫  Psychological Reports, 2004, 95(3Pt-2) pp. 1087—1091

১৬  Americal Heart Association, Abstract—2513

১৭  Australasian Journal on Ageing, 2008, 27(4) : pp. 177—182

১৮  https://en.wikipedia.org/wiki/Bill_wynne