১৯৮০ সালে কয়েকজন ভক্ত অবগত হন যে, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দ্বাদশ অধ্য‌‌ক্ষ পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী ভূতেশানন্দজী মহারাজের জন্মস্থান বাঁকুড়া জেলার সোমসার গ্রামে পৈতৃক বাড়ির এলাকায় একটি শিবমন্দির অযত্নে পড়ে রয়েছে। দেবীদাস চক্রবর্তী প্রমুখ ভক্তবৃন্দ ১৯৯৩ সালে সোমসার গ্রামে গিয়ে ঐ শিবলিঙ্গ দর্শন করেন এবং শিবলিঙ্গের ওপর একটি টিনের আচ্ছাদন নির্মাণ করেন, মোটামুটি একবছরের মধ্যেই।

১৯৯৬ সালে সেখানে শিবাভিষেকের আয়োজন করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে পূজা শেষ হলে অগণিত গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে জয়রামবাটী মাতৃমন্দিরের তৎকালীন অধ্য‌‌ক্ষ স্বামী অমেয়ানন্দ একটি বক্তব্য পেশ করেন। সভার অন্তিম পর্বে স্থানীয় কয়েকজন শি‌ক্ষক সেখানে একটি রামকৃষ্ণ আশ্রম স্থাপনের প্রস্তাব রাখেন। স্বামী অমেয়ানন্দও গ্রামবাসীদের ঐ কাজে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। অকস্মাৎ পূজ্যপাদ মহারাজের পরিবারের তৎকালীন বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য অজিত রায় ঘোষণা করলেন সেখানে অবশ্যই একটি রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা হবে। তাঁদের পরিবারের সকল সদস্য একযোগে তাঁদের সকল জমি দান করার প্রস্তাব দিলেন, প্রকৃতপ‌ক্ষে সেদিনই সোমসার রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠার বীজ রোপিত হলো।

পরবর্তিকালে গঠিত হলো একটি উপদেষ্টামণ্ডলী, আর সেই কেন্দ্রটির নামকরণ হলো ‘সোমসার শ্রীরামকৃষ্ণ সেবামন্দির’। এই সেবামন্দিরের রেজিস্ট্রি হলো ১৯৯৭ সালের ১৭ জানুয়ারি, যার সভাপতি নির্বাচিত হলেন অজিত রায় এবং সম্পাদক ডাঃ গৌর দাস। ক্রমে রায় পরিবারের প্রায় ৩ একর জমি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হলো। পরবর্তিকালে আরো কিছু জমি সংগৃহীত হয়।

আশ্রমের কর্মপ্রবাহ প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভক্তসংখ্যাও বৃদ্ধিলাভ করতে থাকে। এরূপ এক প্রে‌ক্ষাপটে, ১৯৯৮ সালে আশ্রমে একটি ছোট মন্দির এবং সন্ন্যাসীদের জন্য একটি ঘর নির্মিত হয়। ঐ বছর ৪ ডিসেম্বর সেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন তৎকালীন সহাধ্য‌‌ক্ষ শ্রীমৎ স্বামী গহনানন্দজী মহারাজ।  ক্রমে একটি অতিথিনিবাসও নির্মিত হয়। পরবর্তিকালে আশ্রমের বর্তমান মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন এবং ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর সেই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেন তৎকালীন সহাধ্য‌‌ক্ষ শ্রীমৎ স্বামী স্মরণানন্দজী মহারাজ। ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর এই কেন্দ্রটি বেলুড় মঠের একটি শাখাকেন্দ্ররূপে স্বীকৃতিলাভ করে এবং তার নাম হয় ‘রামকৃষ্ণ মিশন, সোমসার।’ নিত্যপূজা, বিশেষ পূজা ছাড়াও এই কেন্দ্রে আছে একটি সাধুনিবাস, একটি সংগ্রহশালা, একটি নিঃশুল্ক কোচিং সেন্টার, একটি দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র; চলেছে নানাপ্রকার ত্রাণ ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প।