।।৩।।
[পূর্বানুবৃত্তি : ভাদ্র ১৪২৯ সংখ্যার পর]
রামকৃষ্ণ-চেতনার অনুশীলন : অনন্যশরণতা
এখন আমাদের জানতে হবে—শ্রীরামকৃষ্ণের স্বরূপ অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুশীলনের উপায়গুলি কী? প্রথম উপায় অনন্যশরণতা। ভক্তশ্রেষ্ঠ হনুমানের অনুসরণে আমরা যেন বলতে পারি—শ্রী-নাথ, জানকী-নাথ এবং সারদা-নাথ ‘পরমাত্মনি’ অভেদ; কিন্তু অপরূপনয়ন, মাধুর্যঘনমুরতি সারদা-নাথ ঠাকুরই আমাদের জীবনসর্বস্ব, আমাদের জীবনদেবতা। তিনিই আমাদের প্রভু ও সকল প্রাণীর নিবাস এবং তাদের কৃতাকৃতের সাক্ষী। তিনিই আমাদের রক্ষক ও প্রত্যুপকার-নিরপেক্ষ হিতকারী ও পরম গতি।
শ্রীরামকৃষ্ণের সবকিছুই মধুর
শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তের কাছে তাঁর সবকিছুই মধুর। তাঁর হাসি মধুর, কথা মধুর, গান মধুর, নৃত্য মধুর। তাঁর হাব-ভাব, চাল-চলন সবই মধুর। শ্রীরামকৃষ্ণ একবার বলেছিলেন : “এখানকার (শ্রীরামকৃষ্ণের) হাব-ভাব, চাল-চলন, কথাবার্তা যাদের ভাল লাগবে তাদের এই শেষ জন্ম।”৪৩ তাঁর সবকিছু মধুর এমনকী বকুনিটাও মধুর। একবার ঠাকুর তাঁর বালকভক্ত সুবোধকে (পরবর্তিকালে স্বামী সুবোধানন্দজী) বলেন একটি গান লিখে দিতে। সুবোধ অনাগ্রহ প্রকাশ করে বলেন—তাঁর হাতের লেখা খারাপ। ঠাকুর তাঁকে বারবার আদেশ করলেও সুবোধও একই উত্তর দিতে থাকেন। ঠাকুর তখন তাঁকে বকতে শুরু করলেন : “দূর বোকা, কেবল বুঝি খেলিয়ে বেড়িয়েছিস।” ঠাকুরের বকুনি শুনেও সুবোধ বিমর্ষ না হয়ে হাসতে থাকেন। ঠাকুর তা দেখে বলেন : “হাঁরে, তোকে যে গাল দিলুম, তুই রাগ করলিনি?” সুবোধ উত্তর দেন : “মশাই, আপনার গালাগালও মিষ্টি।” সুবোধের এই সরল উক্তিতে শ্রীরামকৃষ্ণের স্নেহসিন্ধু উথলে ওঠে। তিনি স্নেহময়ী জননীর মতো সুবোধের চিবুক স্পর্শ করে চুম্বন করেন।৪৪
গীতায় ভগবান বলেছেন—তুমি মদ্গতচিত্ত হও; আমার ভজনশীল ও পূজনশীল হও; কায়মনোবাক্যে আমাকে প্রণাম কর। এইভাবে মৎপরায়ণ হয়ে আমাতে মন ও বুদ্ধি নিবিষ্ট করলে আমাকেই লাভ করবে।৪৫ সুতরাং আমাদের কর্তব্য শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রণাম করা, তাঁর নাম জপ ও ধ্যান করা এবং তাঁর কাছে ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করা, উপরন্তু তাঁর স্বরূপ ও লীলা বিষয়ক গ্রন্থ পাঠ এবং তার মনন ও আলোচনা করা। তাছাড়া তাঁর সম্বন্ধে রচিত স্তব ও ভজন গাওয়া ও শোনা। মহাপুরুষ মহারাজের একটি প্রাসঙ্গিক উপদেশ—“শ্রীরামকৃষ্ণ যুগাবতার, যুগগুরু, যুগাচার্য। তাঁহার পবিত্র, পতিতপাবন নামই এখন জীবের ভবসাগর তরিবার তরী। তাঁহার রূপধ্যান, তাঁহার সম্বন্ধে পাঠ, তাঁহার গুণকীর্তন, তাঁহার শ্রীমূর্তি পূজা, তাঁহার ভক্তদের সঙ্গ ও সেবা—এই সকল করিতে পারিলেই জীব পবিত্র হইয়া যাইবে—উহাতেই মোক্ষলাভ হইবে, সংসারের অবিদ্যা-বন্ধন কাটিয়া যাইবে।”৪৬
প্রণাম
সাধারণত আমরা মন্দিরে প্রবেশ করেই শ্রীরামকৃষ্ণের পট বা বিগ্রহের সম্মুখে ভূমিষ্ঠ বা সাষ্টাঙ্গ হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রণামপর্ব শেষ করে ফেলি। কিন্তু প্রণামের এক আদর্শ পদ্ধতি আছে। এপ্রসঙ্গে স্বামী ব্রহ্মানন্দজীর সেবক ও সচিব এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম প্রেসিডেন্ট স্বামী শঙ্করানন্দ একবার বলেছিলেন : “মন্দিরে ঠাকুরকে কিভাবে প্রণাম করতে হয় জান? কখনও মন্দিরে গিয়ে ঢিপ করে প্রণাম করবে না। আগে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ঠাকুরকে কিছুক্ষণ দেখবে। ভাববে, ঠাকুর জীবন্ত, তোমায় দেখছেন। এইভাবে মন স্থির হলে তখন প্রণাম করবে এবং ভাববে ঠাকুরের পা জড়িয়ে ধরে প্রণাম করছো।”৪৭
নামজপ
নিরন্তর নামজপ অন্যতম কার্যকরী এক সাধনা, যা সকলের পক্ষেই উপযোগী। কেননা নামজপ সব স্থানেই, সব অবস্থাতেই এবং অধিকারী নির্বিশেষে সকলেই করতে পারে। শ্রীচৈতন্যদেবের ‘শিক্ষাষ্টকম্’-এ আছে—“নাম্নামকারি বহুধা নিজসর্বশক্তিস্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃ স্মরণে ন কালঃ।”৪৮ অর্থাৎ—হে প্রভু, তোমার নামাবলি বহুপ্রকারে প্রকাশিত হয়েছে, সেই নামে তোমার সকল শক্তি নিহিত আছে। নাম করার কোনো নির্দিষ্ট সময়ও নেই। স্বামী ব্রহ্মানন্দজী নিরন্তর নামজপের অভ্যাসকে ‘সহজ সাধন’ বলেছেন। আর স্বামী শিবানন্দজী তাকে বলেছেন ‘গুহ্য সাধনা’। একবার এক সন্ন্যাসী তাঁকে কর্মজনিত মানসিক বিক্ষিপ্ততা এবং অশান্তির কথা জানালে মহাপুরুষ মহারাজ বলেন : “নিত্য প্রার্থনা করে কাজে লাগবে। আর একটি গুহ্য সাধনার কথা বলছি—সব সময় সব কাজের মধ্যেই ইষ্টমন্ত্র মনে মনে জপ করার অভ্যাস কর। কর্মেন্দ্রিয় কাজ করবে, কিন্তু মনকে লিপ্ত রাখবে ভগবানের ধ্যান-চিন্তনে ও নামগানে। নিত্য এইভাবে অভ্যাস করে দেখ, মনে সব সময়ই পূর্ণ শান্তি থাকবে। মন কিছুতেই চঞ্চল হবে না, শত ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও অবিচলিত থাকবে। করেই দেখ।”৪৯
শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য স্বামী ওঙ্কারানন্দ ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞ, কর্মকুশল ও ভজনশীল সন্ন্যাসী; পরবর্তিকালে রামকৃষ্ণ সংঘের সহাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। নামজপ প্রসঙ্গে তাঁর একটি পরামর্শ বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য—“জপের বা স্মরণ-মননের আদৌ কোনো নির্দিষ্ট সময় নাই। সব অবস্থায় মনে মনে জপ করে যাওয়াই বিধেয়। এইভাবে চললে ঈশ্বরে অনুরাগ আসবেই। ঠাকুর বলেছেন জপ করবে মনে, বনে ও কোণে। বর্তমানে বন ও কোণ সুদূরপরাহত, অতএব মনই একমাত্র স্থান, যা সবসময় নিজের সঙ্গেই রয়েছে। এ-কারণে স্থান-কাল, সময়-অসময়, শৌচ-অশৌচ যে ভাবেই শরীর থাকুক না কেন, লিপ্ত মনকে যেন নামগুণগান থেকে সরিয়ে এনো না। মন ফাঁকির সর্দার। সুড়ৎ করে সরে পড়বে। এ কারণে তীক্ষ্ণ নজর রাখবে, যেন ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ না পায়।”৫০
এইভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের নামজপের প্রত্যক্ষ ফল একদিকে যেমন আমাদের হৃদয়ে তাঁর নিরন্তর সান্নিধ্যবোধ আনবে, তেমনি আবার আমাদের মনে শক্তি, সাহস ও শান্তি জোগাবে; উপরন্তু মনের অবাঞ্ছিত চিন্তাগুলোকেও প্রতিরোধ করবে। তাছাড়া এর ফলে ঠাকুরের প্রতি আমাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে এবং রামকৃষ্ণ-চেতনা গভীর হতে থাকবে।
ধ্যান
শ্রীরামকৃষ্ণের ধ্যানের একটি প্রচলিত পদ্ধতি— হৃদয়মন্দিরে তাঁর মূর্তি কল্পনা করে নিয়ে তাতে মনকে নিবিষ্ট করা। সেই সময় আমরা ধারণা করার চেষ্টা করতে পারি যে, জগতের যত সৌন্দর্য, মাধুর্য, পবিত্রতা, শান্তি, আনন্দ, প্রেম, করুণা, জ্ঞান এবং সর্বোপরি আধ্যাত্মিকতার ঘনীভূত মূর্তি হলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। সেই শ্রীরামকৃষ্ণ আমাদের হৃদয়ে জ্যোতির্ময় ও আনন্দময় মূর্তিতে বিরাজমান।
বাস্তবিক, তিনি তো নিরন্তর বসেই আছেন আমাদের কাছে পাওয়ার জন্য, কিন্তু আমরা কি তাঁর কাছে যাই? তিনি আমাদের দিকে পলকহীন নয়নে তাকিয়ে আছেন, কিন্তু আমরা কতক্ষণ তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি? তিনি আমাদের কথা শোনার জন্য সদা উন্মুখ, কিন্তু আমরা অন্যকে কত কথা শোনাই, তাঁকে শোনাই কৈ?
ধ্যান হচ্ছে সেই সময় যখন তাঁর কাছে একান্তে বসা যায়। ধ্যান হচ্ছে সেই সময় যখন তাঁকে অপলক নয়নে দেখা যায়—কখনো বাইরের চোখ দিয়ে, কখনো অন্তরের চোখ দিয়ে। ধ্যান হচ্ছে সেই সময় যখন তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা করা যায়। ধ্যান হচ্ছে সেই সময় যখন তাঁর সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায়।
যাঁরা বলে থাকেন—সময়ের অভাবে ধ্যান–জপ হয়ে ওঠে না, তাঁদের জন্য প্রখ্যাত গীতিকার রজনীকান্ত সেন রচিত সুপরিচিত গানের একটি অংশ প্রাসঙ্গিক—‘আমি, সকল কাজের পাই হে সময়,/ তোমারে ডাকিতে পাইনে’।৫১ জীবনধারণের জন্য যেমন আলো–বাতাস, খাদ্য–পানীয়, নিদ্রা একান্ত প্রয়োজনীয়, তেমনি আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের জন্য, মানসিক শান্তিলাভের জন্য ধ্যান–জপ একান্ত প্রয়োজনীয়। এই বোধের অভাবই তথাকথিত সময়ের অভাবের প্রকৃত কারণ।
নিম্নে বর্ণিত কতকগুলি খণ্ডচিত্র আমাদের শ্রীরামকৃষ্ণের রূপধ্যানে সহায়ক হতে পারে। প্রথমটি, স্বামী অদ্ভুতানন্দজীর বর্ণনা—“(একদিন) সমাধিতে তাঁর যা মূর্তি দেখেছি, তার সঙ্গে অন্য কোন মূর্তির তুলনা হয় না। সেদিন ঠাকুরের গায়ের রঙ্ কি বদ্লে গেছিলো! মুখখানিতে এমন অভয় ও করুণা মেশানো ছিল, কি বলবো! এখনো ত হামি সে মূর্তি ভুলতে পারে নি।”৫২
দ্বিতীয়টি রামলাল দাদার বর্ণনা—“(ঠাকুর আমাকে) একদিন বললেন, ‘আমায় হিন্দুস্থানিদের মতো মোটা হলুদ মাখা পৈতে পরিয়ে দে।’ তাই পৈতে এনে হলুদে চুবিয়ে গ্রন্থি দিয়ে পরিয়ে দিলুম। তিনি একখানি চাঁপা ফুলের রঙে ছোবানো লালপেড়ে কাপড় পরেছিলেন। হলদে ছোবানো কাপড় তিনি পরতে বড় ভালবাসতেন। আমি বললুম, ‘বেশ হয়েছে, হলদে কাপড়, হলদে পৈতে, পীতাম্বর ঠিক যে নারায়ণ।’”৫৩
১৮৮৩ সালের ১১ মার্চ দক্ষিণেশ্বরে জন্মোৎসবের বর্ণনা প্রসঙ্গে শ্রীম লিখেছেন : “ঠাকুর কিয়ৎকাল বিশ্রাম করিয়া, নববস্ত্র পীতাম্বর পরিধান করিয়া ছোট খাটটিতে বসিলেন। পীতাম্বরধারী সেই আনন্দময় মহাপুরুষের জ্যোতির্ময় ভক্তচিত্তবিনোদন, অপরূপ রূপ ভক্তেরা দর্শন করিতেছেন। সেই দেবদুর্লভ, পবিত্র, মোহনমূর্তি দর্শন করিয়া নয়নের তৃপ্তি হইল না। ইচ্ছা, আরও দেখি; আরও দেখি, সেই রূপসাগরে মগ্ন হই।”৫৪
এইভাবে রূপধ্যান করা ছাড়াও আমরা শ্রীরামকৃষ্ণের স্বরূপধ্যান, গুণধ্যান, লীলাধ্যান, বাণীধ্যানও করতে পারি। উপরন্তু সবকিছুকে ‘রামকৃষ্ণায়িত’ করার ধ্যানও ধ্যানের একটি বিশিষ্ট পদ্ধতি, যার কথা আমরা পরে আলোচনা করব।
মানসপূজা
শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপূজাও রামকৃষ্ণ-চেতনা বৃদ্ধির আরেকটি কার্যকরী উপায়। অর্থাৎ, বিধি অনুযায়ী পূজায় যেভাবে ঠাকুরকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়, তাঁর সামনে ধূপ-দীপ জ্বালানো হয়, তাঁকে পঞ্চোপচারে আরতি করে ভোগ নিবেদন করা হয়—সেইভাবে মনে মনে সেই প্রক্রিয়াগুলিই কল্পনা করে তাতে চিত্তকে নিবিষ্ট করা। স্বামী অখণ্ডানন্দজীর এপ্রসঙ্গে পরামর্শ—“মানস পূজা করবে।… ধ্যান করতে করতে মন যদি ইষ্টদেবতার প্রতি একাগ্র না হতে চায়, তো মনে করবে—রাশি রাশি ফুল দিয়ে তাঁকে পুজো করছ, মালা পরিয়ে দিচ্ছ, থালা থালা বিল্বপত্র, পুষ্প, চন্দন, নৈবেদ্য সব দিচ্ছ। এইরকম ভাবতে ভাবতে ধ্যান আপনি জমে যাবে!”৫৫
মানসপূজার প্রক্রিয়াটি আরো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বামী অখণ্ডানন্দজী শ্রীরামকৃষ্ণ এবিষয়ে তাঁদের কী শিখিয়েছিলেন তার উল্লেখ করেছেন : “মন বিক্ষিপ্ত হ’ত না, তবু ঠাকুর শেখাচ্ছেন—‘ভাববি—যেন হৃদয়-মন্দিরে ইষ্টদেবতা রয়েছেন—সুন্দর শান্ত হাসি হাসি মুখ; এই তাঁর আরতি হচ্ছে প্রদীপ দিয়ে, কর্পূর দিয়ে, ফুল দিয়ে, চামর দিয়ে, আরতি যেন আর ফুরোয় না। অনেক পরে যদি আরতি হয়ে গেল তো অমনি ফুলের মালা গাঁথতে বসে গেলি—এই সুন্দর সুন্দর ফুল—যেমন দেখতে তেমনি সুগন্ধ, বড় বড় যুঁই-এর গোড়ে, আরও সব ফুল এল। এই তাঁর পাদপদ্মে মুঠো মুঠো পদ্মফুল অঞ্জলি দিচ্ছিস—রক্তপদ্ম, শ্বেতপদ্ম। পদ্মফুল নিঃশেষে ফুরিয়ে গেল তো জবা আরম্ভ হ’ল, জবার স্তূপ হয়ে গেল। তারপর আরও সব ফুল—সাদা ফুল, নানাবিধ ফুল। একটার পর একটা—শেষ হ’তে দিবিনি! ফুলের পরে এল ফল মূল মিষ্টি নানাবিধ বেশ ক’রে সাজিয়ে নিবেদন করছিস। এইরকম ক’রে মনটা লাগিয়ে রাখতে হয়। মনের গতিই বিষয়ভোগের দিকে… সেই ভোগটা ভগবানের সঙ্গে, ইষ্টের সঙ্গে করলে তার দোষ কেটে যায়।”৫৬
শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য স্বামী গিরিজানন্দ তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন : “সাধন সম্বন্ধে মা আমাকে বলেছিলেন, ‘মনে মনে ঠাকুরকে স্নান করাচ্ছ, খাওয়াচ্ছ, পূজা কচ্ছ, হাওয়া কচ্ছ, এইরূপ চিন্তা করবে।’”৫৭
বৈধী পূজার সময় নানা উপচারে পূজার পর যেমন অগ্নি প্রজ্বলন করে হোম করা হয় এবং তাতে বিল্বপত্রাদি আহুতি দেওয়া হয়, তেমনি হৃদয়ে রামকৃষ্ণ–অগ্নি প্রজ্বলিত করে তাতে কাম, ক্রোধ, দ্বেষবুদ্ধি, লোভ, বাসনা, আসক্তি, ভয়, অহংকার, সংস্কার, কর্মফল সব আহুতি দিয়ে নিজেকে শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত আত্মা ধারণা করাও একটি আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া।
প্রার্থনা
রামকৃষ্ণ-চেতনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রার্থনার গুরুত্ব অপরিসীম। বাইবেল-এ উল্লিখিত ‘Lord’s Prayer’ ঈশ্বরের কাছে কীভাবে প্রার্থনা করা উচিত তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নিষ্ঠাবান খ্রিস্টভক্তরা প্রতিদিন সেই অনুযায়ী প্রার্থনা করে থাকেন। প্রার্থনা কীভাবে করতে হয় কথামৃত-এ বিভিন্ন প্রসঙ্গে তার বর্ণনা আছে। উপরন্তু দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দিরে জগন্মাতার সজীব উপস্থিতি অনুভব করে নরেন্দ্রনাথের প্রার্থনাও সুপরিচিত—‘মা, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও; জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও…।’ পূর্বোক্ত প্রার্থনাগুলির অনুসরণে আমরাও শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি : প্রভু! তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় আমায় মুগ্ধ করো না। আমি আচারহীন, ক্রিয়াহীন, জ্ঞানহীন, ভক্তিহীন, বিচারহীন, বিবেকহীন, বৈরাগ্যহীন। আমায় জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও। তুমি আমাকে দয়া কর, কৃপা কর।
আবার, অব্যভিচারিণী প্রার্থনা যা অব্যভিচারিণী ভক্তির অন্যতম অঙ্গ তা হলো—ঠাকুর! আমি আর কিছু চাই না, এমনকী সমাধিও নয়, মুক্তিও নয়। তোমাকে চাই—শুধু তোমাকেই। আর এই কর যেন জীবনে, মরণে, শয়নে, স্বপনে—জাগরণে তোমাকে কখনো বিস্মৃত না হই। “চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না।/ সংসারগহনে নির্ভয়নির্ভর, নির্জনসজনে সঙ্গে রহো।।”৫৮
শ্রীরামকৃষ্ণ কি আমাদের প্রার্থনা শোনেন?—এক ভক্তের এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীশ্রীমা উত্তেজিত কণ্ঠে বলেছিলেন : “ঠাকুর যদি সত্য হন, শুনেনই শুনেন।”৫৯ এই প্রসঙ্গে আরো প্রশ্ন তোলা যায় যে, ঠাকুর ও মাকে যে ভোগ দেওয়া হয়, তাঁরা কি তা খান—না এটি একটি কল্পনা? এবিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় একজন ভক্ত মাকে প্রশ্ন করলেন : “ঠাকুরকে ও তোমাকে যে ভোগ দিই তা কি ঠাকুর পান? তুমি কি তা পাও?” শ্রীশ্রীমায়ের নির্দ্বিধ উত্তর : “হাঁ।”— “কি করে বুঝব?”—“কেন, গীতায় পড় নাই—ফল, পুষ্প, জল ভগবানকে ভক্তি করে যা দেওয়া যায়, তা তিনি পান?”৬০
স্বাধ্যায়
স্বাধ্যায়ের সংকীর্ণ অর্থ—বেদ অধ্যয়ন; ব্যাপক অর্থ—যেকোনো শাস্ত্র তথা ধর্মীয় গ্রন্থের অধ্যয়ন। স্বাধ্যায়ের কতকগুলি ক্রম আছে। যথা—প্রথমে কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ পঠন ও শ্রবণ এবং তার অর্থ অনুধাবন; তারপর অধীত গ্রন্থাদির বিষয়বস্তু বারবার মনন এবং আচরণ ও কর্মে সেগুলির প্রতিফলনের মাধ্যমে তাদের আত্তীকরণ (internalisation/assimilation)।
বৈদিক যুগে গুরুর কাছে শাস্ত্রাধ্যয়ন শেষ করে শিষ্যের গার্হস্থাশ্রমে প্রবেশের পূর্বে গুরু শিষ্যকে বিশেষ করে মনে করিয়ে দিতেন : “স্বাধ্যায়ান্মা প্রমদঃ।… স্বাধ্যায়-প্রবচনাভ্যাং ন প্রমদিতব্যম্।”৬১
রামকৃষ্ণ-সাধনার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ হলো—নির্বাচিত শাস্ত্রগ্রন্থ ও রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্য নিয়মিত পাঠ এবং তার আলোচনা ও মনন করা, যার গুরুত্ব সম্বন্ধে আমরা অনেকে সচেতন নই বলে মনে হয়। শ্রীশ্রীমাও সৎসঙ্গ ও সদ্গ্রন্থ পাঠ করার কথা বলেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং এই ধরনের পাঠ ও আলোচনার যে বিশেষ পক্ষপাতী ছিলেন তা তাঁর শরীর যাওয়ার পরের একটি ঘটনায় হৃদয়ঙ্গম হয়। ঘটনাটি এই—আশুতোষ রায় সাধুদর্শন করার জন্য দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের কাছে কখনো কখনো যেতেন। তিনি রোগা ও বেঁটে ছিলেন। ঠাকুর তাঁকে ‘ঝুনো সরষে’ বলে ডাকতেন। ঠাকুরের দেহ যাওয়ার অনেক বছর পরে যখন তিনি শিলঙে চাকরি করছেন, সেই সময় ঠাকুরের বিশেষ ভক্ত হন। শিলঙে তাঁদের একটি সমিতির মতো ছিল। সেখানে কথামৃত প্রভৃতি পাঠ হতো। এরপর তাঁরা ঢাকায় বদলি হন, ঢাকায় আগে থেকেই একটি সমিতি থাকায় শিলং থেকে এসে ভক্তেরা সেখানেই যোগ দেন। নিজেদের সমিতির আর পৃথক অস্তিত্ব থাকল না। কিন্তু তাঁরা যখন রাঁচিতে বদলি হয়ে এলেন, তখন আর নতুন করে শিলঙের মতো কথামৃত পাঠ আরম্ভ না হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
রাঁচির বাড়িতে আশুতোষ রায় রাত্রে শুয়ে আছেন, হঠাৎ কার ডাকে তাঁর ঘুম ভেঙে যেতে শোনেন, কে ডাকছে—“ও ঝুনো সরষে!” অবাক হয়ে তিনি ভাবছেন, আমার এই নাম তো কেউ জানে না, ঠাকুরই শুধু ডাকতেন। দরজা খুলে দেখলেন ঠাকুর রাস্তায় দাঁড়িয়ে—গেরুয়া পরা, খড়ম পায়ে, চিমটে হাতে! জ্যোৎস্না রাত। বলছেন : “এখানকার কিছু কথা হতো। তা ঢাকায় নয় দরকার ছিল না; এখানে ওটি বন্ধ কেন করলে? উটি করো না।”—বলে অন্তর্ধান হলেন।৬২
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তো বটেই, এমনকী বিদেশেও (জাপানেও) কোনো কোনো জায়গায় ঠাকুরের ভক্তেরা নিয়মিত পাঠচক্রের আয়োজন করেন এবং সেখানে নানাভাবে শ্রীরামকৃষ্ণ-চর্চা করেন। বলা বাহুল্য, শ্রীরামকৃষ্ণ বিষয়ক স্বাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এই পাঠচক্রগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্তব ও ভজন
রামকৃষ্ণ-চেতনার অনুশীলনে স্তবস্তোত্র ও ভজনের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। ঈশ্বরসাধনায় স্তব ও ভজন যে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে এবং ভগবানের প্রতি অনুরাগবৃদ্ধির অন্যতম সহায়ক, তার উল্লেখ বিভিন্ন ভক্তিশাস্ত্রে আছে, বহু ভক্ত-সাধকের জীবনেও তার পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন : “গানে রামপ্রসাদ সিদ্ধ। ব্যাকুল হয়ে গান গাইলে ঈশ্বরদর্শন হয়।”৬৩ ঠাকুরের জীবনেও আমরা দেখি যে, ভগবানের মহিমাসূচক স্তোত্রে ও ভজনে তাঁর একান্ত অনুরাগ ছিল এবং বহুবার মধুরকণ্ঠে কখনো একাকী, কখনো ভক্তসঙ্গে মত্ত হয়ে তিনি ঈশ্বরের নামগুণগান কীর্তন করেছেন, কখনো বা নৃত্য করেছেন। কথামৃত-এর প্রায় প্রতি পৃষ্ঠাতেই আমরা এর বর্ণনা পাই।
ঠাকুর গীতোক্ত ভাবে মুগ্ধ হয়ে গান করতেন। রামলাল-দাদা ঠাকুরের স্মৃতিচারণা করে বলেছেন : “যদি কেউ তালের দিকে নজর রেখে গাইত, হয়তো হঠাৎ তালটা কেটে গেল, অমনি ঠাকুর শুনে উঁহু উঁহু করে উঠতেন। আর যদি কেউ ভাবের সহিত তন্ময় হয়ে গাইত, ঠাকুর তাদের আর ততটা ধরতেন না। ঠাকুর অত রাগ-রাগিণীর ধার ধারতেন না। তিনি অতি ভাবের সহিত করুণস্বরে একেবারে তন্ময় হয়ে সুরের বেশ টান টুন দিয়ে আবার মধ্যে মধ্যে আখর দিয়ে গাইতেন। অনেকবার দেখেছি ঠাকুরকে গাইতে গাইতে সমাধিস্থ হয়ে যেতেন।”৬৪
তবে ঠাকুর যে শুধু করুণভাবে গাইতেন তা নয়, পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনো কখনো তেজস্বিতার সঙ্গে তাল ঠুকেও গাইতেন। যেমন ব্রাহ্মভক্ত ও ঠাকুরের বিশেষ অনুরাগী মণি মল্লিক বৃদ্ধবয়সে পুত্রের মৃত্যু হওয়ায় তাকে দাহ করে শ্মশান থেকে সরাসরি ঠাকুরের কাছে এসেছিলেন দুঃসহ শোক নিবারণের জন্য। সেখানে উপস্থিত অনেকেই তাঁকে নানাভাবে সমবেদনা জানাতে লাগলেন। ঠাকুর সেসব শুনলেও নিজে কিছু বলছিলেন না। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অপূর্ব তেজের সঙ্গে তিনি তাল ঠুকে গান ধরলেন : “জীব সাজ সমরে।/ ঐ দেখ্ রণবেশে কাল প্রবেশে তোর ঘরে।” গানের অন্তর্নিহিত ভাব মণি মল্লিকের হৃদয়ে প্রবেশ করায় এবং তারপর ঠাকুরের সমবেদনামূলক নানা কথায় তাঁর পুত্রশোকের মর্মান্তিক দুঃখ দূর হলো, তিনি মনের শান্তি ফিরে পেলেন।৬৫
শ্রীরামকৃষ্ণের মহিমাসূচক গান গাওয়া, শোনা, স্তোত্রাদি আবৃত্তি এবং সেগুলির মনন তাঁর প্রতি আমাদের অনুরাগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। ‘খণ্ডন-ভব-বন্ধন, জগ-বন্দন বন্দি তোমায়’; ‘দুখিনী ব্রাহ্মণী কোলে, কে শুয়েছ আলো ক’রে’; ‘রামকৃষ্ণ নামের বান ডেকেছে ভাই’; ‘জয় “রামকৃষ্ণ” “রামকৃষ্ণ” বল আমার মন’; ‘তুমি ব্রহ্ম, রামকৃষ্ণ, তুমি কৃষ্ণ, তুমি রাম’; ‘পাখী তুই ঠিক বসে থাক’; ‘অরূপ-সায়রে লীলা-লহরী’; ‘নয়নাভিরাম মোর নয়নাভিরাম/ এস রামকৃষ্ণ মোর নয়নাভিরাম’; ‘আজি প্রেমানন্দে মন রে গাহ’; ‘ভকত-বিলাসী, দীন ভক্তে দেখা দাও হে আসি’—শ্রীরামকৃষ্ণ-বিষয়ক এই গানগুলির কোনোটিতে তাঁর রূপের, কোনোটিতে তাঁর স্বরূপের বর্ণনা; কোনোটিতে প্রার্থনা বা আত্মনিবেদনের ভাব। আবার কোনো গান তাঁর প্রতি অসীম ভালবাসার প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথের ‘পূজা’ পর্যায়ের অসাধারণ গানগুলি নিরাকারে ভজন হলেও সেগুলিতে শ্রীরামকৃষ্ণের রূপ ও ভাব আরোপিত করে গেয়ে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের উপযোগী করে নিতে পারি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ রবীন্দ্রনাথের ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’ গানটি, যা স্বামীজীরও প্রিয় ছিল এবং ঠাকুরকে গেয়ে শুনিয়েছিলেন।
কেবলমাত্র সুকণ্ঠে ও সুর-তাল-লয়ের দিকে নজর রেখে ভজন গাইলে তা শ্রুতিসুখকর হতে পারে কিন্তু তার মধ্যে যদি ভাব না থাকে তাহলে সে-গান হৃদয়কে তেমন স্পর্শ করে না বা মনকে ভগবন্মুখী করে না; তার প্রভাবও হয় ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু যখন গায়ক ভজনের অন্তর্নিহিত ভাব তথা তার উদ্দিষ্ট দেবদেবীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গান করেন, তখন সেই গান গায়ক এবং শ্রোতাকেও দিব্যভাবে ভাবিত করে ভগবানের প্রতি অনুরাগবৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। গায়ক ও শ্রোতা উভয়ের পক্ষেই গানের কথাগুলিও মনন করা প্রয়োজন, কারণ তা আমাদের মনে একটি স্থায়ী ছাপ ফেলে। যেমন স্বামী প্রেমেশানন্দ রচিত ‘অরূপ- সায়রে লীলা-লহরী’ গানটি শুনে মহাপুরুষ মহারাজ স্বামী প্রেমেশানন্দকে বলেন : “তুমি একটি গানের জন্য অমর হয়ে রইলে। আহা, আহা, কী সুন্দর ভাব সব দিয়েছ।”৬৬
রামকৃষ্ণ-চেতনার রহস্য সিদ্ধগায়ক রামপ্রসাদের নিম্নলিখিত মাতৃসংগীতের মধ্যে নিহিত—
“মন বলি, ভজ কালী, ইচ্ছা হয় তোর যে আচারে
মুখে গুরুদত্ত মহামন্ত্র দিবানিশি জপ করে।।
শয়নে প্রণাম জ্ঞান, নিদ্রায় কর মাকে ধ্যান;
নগর ফের মনে কর প্রদক্ষিণ শ্যামা মারে।।
চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় যত রস এ সংসারে।
আহার কর মনে কর আহুতি দিই শ্যামা মারে।।
যত শোন কর্ণপুটে, সবই মায়ের মন্ত্র বটে;
কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী, বর্ণে বর্ণে নাম ধরে।।
আনন্দে রামপ্রসাদ রটে, মা বিরাজেন সর্বঘটে;
ঘটে ঘটে যতরূপ, মা আমার সে রূপ ধরে।।”৬৭
আমাদের সাধনার উপযোগী করার জন্য গানটির উদ্দিষ্ট দেবী মা কালীর স্থলে ঠাকুরকে কল্পনা করে নিয়ে গানে বর্ণিত সাধনপ্রক্রিয়ায় আমরা নিজেদের নিয়োজিত করতে পারি।
সংগীতশিক্ষক প্রয়াত বীরেশ্বর চক্রবর্তী ঠাকুর-মা-স্বামীজীর গান শিখেছিলেন স্বামী চণ্ডিকানন্দের কাছে। তিনি বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের ছাত্রদের বলতেন : “ভক্তিগীতি শুধু গাইলে হবে না, তার ভাবটাও নেওয়া চাই। তুমি গাইছ—‘মা আছেন আর আমি আছি, ভাবনা কি আছে আমার,/ মায়ের হাতে খাই পরি, মা নিয়েছেন আমার ভার।’ কিন্তু ভেবে দেখ তো, শ্রীশ্রীমা যখন তোমার ভার নিয়েছেন, তখন সত্যি সত্যি তোমার ভাবনা চলে গিয়েছে কি না!”
চার যোগের সমন্বয়
রামকৃষ্ণ-চেতনা অনুশীলনের একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ হলো সাধনজীবনে যোগ, ভক্তি, জ্ঞান ও কর্ম—এই চারটি যোগের সুষম সমন্বয় ঘটানো। কারণ, শ্রীরামকৃষ্ণ একঘেয়েমি পছন্দ করতেন না। একেই স্বামীজী বলেছেন—‘রামকৃষ্ণ-মুষায়’ উত্তমরূপে ‘দ্রুত’ হওয়া। [ক্রমশ]
তথ্যসূত্র :
৪৩ স্বামী চেতনানন্দ (সংকলক ও সম্পাদক), স্বামী সুবোধানন্দের স্মৃতিকথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০০৫, পৃ: ২০১
৪৪ দ্র. ঐ, পৃ: ১০১
৪৫ দ্র. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ৯।৩৪
৪৬ স্বামী সুহিতানন্দ (সংকলক), মুসাফিরের গাঁটরি, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৬, পৃ: ১৪৫
৪৭ প্রয়াত স্বামী ধীরানন্দজীর কাছে শ্রুত
৪৮ স্তবকুসুমাঞ্জলি, পৃ: ২৫৭
৪৯ স্বামী অপূর্বানন্দ (সংকলিত), শিবানন্দ-স্মৃতিসংগ্রহ, রামকৃষ্ণ-শিবানন্দ আশ্রম, বারাসত, ১৩৮৯, ২য় খণ্ড, পৃ: ৩৬৬
৫০ স্বামী ওঁকারানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দ ও ধর্মপ্রসঙ্গ, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রম, হাওড়া, ১৯৮৩, পৃ: ২৯
৫১ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ (সম্পাদনা), রজনীকান্ত কাব্যগুচ্ছ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৯, পৃ: ৬০
৫২ চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর, শ্রীশ্রীলাটু মহারাজের স্মৃতি-কথা, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৮৫, পৃ: ১৮৬
৫৩ স্বামী চেতনানন্দ, (সম্পাদক ও সংকলক), শ্রীরামকৃষ্ণকে যেরূপ দেখিয়াছি, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৬, পৃ: ২৫
৫৪ শ্রীম-কথিত, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১১, অখণ্ড, পৃ: ১৫০
৫৫ স্বামী চেতনানন্দ (সংকলক), স্বামী অখণ্ডানন্দকে যেরূপ দেখিয়াছি, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৯৯, পৃ: ৪৮
৫৬ স্বামী নিরাময়ানন্দ, স্বামী অখণ্ডানন্দের স্মৃতিসঞ্চয়, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৯৬, পৃ: ৪৬-৪৭
৫৭ স্বামী চেতনানন্দ (সংকলিত), মাতৃদর্শন, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৯৩, পৃ: ৪৬
৫৮ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ, গীতবিতান, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, ১৪১২, পৃ: ১৬৯; ঈশ্বরের প্রার্থনা করতে শেখানো : “মা, দেখা দে…।” (স্বামী অখণ্ডানন্দের স্মৃতিসঞ্চয়, পৃ: ৪৬)
৫৯ শ্রীশ্রীমায়ের কথা, উদ্বোধন কার্যালয়, ২০১৯, অখণ্ড, পৃ: ৮৪
৬০ ঐ, পৃ: ৮৬
৬১ তৈত্তিরীয়োপনিষদ, ১।১১।১
৬২ দ্রঃ শ্রীশ্রীমায়ের কথা, পৃ: ২৪৭-৪৮
৬৩ কথামৃত, পৃ: ৩৫৬
৬৪ শ্রীরামকৃষ্ণকে যেরূপ দেখিয়াছি, পৃ: ২৪
৬৫ দ্রঃ ‘গুরুভাব—পূর্বার্ধ’, লীলাপ্রসঙ্গ, ১ম ভাগ, পৃ: ২২
৬৬ স্বামী অব্জজানন্দ, এক সোনার মানুষ, উদয়ন, শান্তিকুটির, শিমুলতলা, ১৯৯৬, পৃ: ৭৩
৬৭ সংগীত-সংগ্রহ, রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ, বৈদ্যনাথ-দেওঘর, ঝাড়খণ্ড, ২০০৯, পৃ: ১৩০