[স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে ভবিষ্যৎ ভারতের রূপরেখা নির্মাণে নানান আলোচনা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ ভারতের স্বপ্ন স্বামী বিবেকানন্দ দেখেছিলেন এবং আমাদের সামনে সেই রূপটি অতি স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি চাইতেন ভবিষ্যৎ ভারত গড়ে তুলতে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। তিনি বিশ্বাস করতেন ভবিষ্যৎ ভারত গড়ে উঠবে আদর্শ মানুষের হাত দিয়ে। সেজন্য আগে নিজেদের তৈরি করা উচিত। আদর্শ মানুষ প্রসঙ্গে স্বামীজী বলছেন : “আমরা এমন মানুষ দেখিতে চাই, যিনি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গড়িয়া উঠিয়াছেন… উদারহৃদয়, উন্নতমনা (কর্মে নিপুণ)। প্রয়োজন এইরূপ ব্যক্তির, যাঁহার অন্তঃকরণ জগতের দুঃখকষ্ট তীব্রভাবে অনুভব করে।… আর (আমরা চাই) এমন মানুষ, যিনি যে শুধু অনুভব করিতে পারেন তাহা নয়, পরন্তু বস্তুনিচয়ের অর্থ ধরিতে পারেন, যিনি প্রকৃতি এবং বুদ্ধির মর্মস্থলে গভীরভাবে ডুব দেন। (আমাদের দরকার) এমন মানুষের, যিনি সেখানেও থামেন না, (কিন্তু) যিনি (সেই অনুভবকে বাস্তব কর্মে) রূপায়িত করিতে ইচ্ছুক। মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং হাত—এই তিনটির এইপ্রকার সমন্বয় আমাদের কাম্য।”
অর্থাৎ স্বামীজীর আদর্শ মানুষেরা হবেন হৃদয়বান, কর্মঠ, চিন্তাশীল ও শক্তিশালী। স্বামীজী চেয়েছিলেন এইরকম আদর্শ মানুষদের মাধ্যমে আদর্শ সমাজ ও দেশ গড়ে উঠবে। এবিষয়ে তিনটি দিক গুরুত্বপূর্ণ—আমাদের হৃদয়ের প্রসারতা, কর্মকুশলতা ও মনের বিকাশসাধন। এই তিনটি জায়গা আগামী ভবিষ্যৎ ভারত গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নিতে পারে। আমরা এই জায়গাগুলোকেই ধরার চেষ্টা করেছি। পৌঁছে গিয়েছিলাম তিনজনের কাছে। একজন সন্ন্যাসী—তিনি সুদূর আমেরিকায় রয়েছেন। তাঁর কাছে আগামী ভারতবর্ষের দিকে তাকিয়ে কীভাবে আমাদের মনকে আমরা তৈরি করব, মানসিক জায়গাটাকে আরো সুদৃঢ় করতে পারি—সেই প্রেক্ষিতে জেনেছি। একজনের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম, যিনি রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুলের সঙ্গে বহুদিন ধরে যুক্ত ছিলেন শিক্ষক হিসাবে—তাঁর কাছ থেকে শুনেছি স্বামীজীর বলা ত্যাগ ও সেবার মাধ্যমে হৃদয়ের প্রয়োগের কথা। আরেকজন যুবক, যিনি স্বামীজীর ভাব নিয়ে আগামী ভারতের জন্য যুবক-যুবতীদের তৈরি করার মহতী প্রচেষ্টা করছেন; যাতে তারা ভবিষ্যৎ ভারতের আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠতে পারে। এই সম্পর্কিত তাঁদের ভাবনাগুলোকে আমরা এখানে একত্রিত করার চেষ্টা করেছি।—সম্পাদক]
স্বামী বিবেকানন্দ আদর্শ মানুষের কথায় হেড, হার্ট ও হ্যান্ডের সমন্বয়ের কথা বলেছেন। হৃদয়ের বিকাশের কথায় স্বামীজীর বলা ত্যাগ ও সেবার কথা মনে আসে। আজ ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তরে এসে আমরা ত্যাগ ও সেবার আদর্শে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?
আজ স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে দাঁড়িয়ে স্মরণ করব স্বাধীনতার এক অর্থে রূপকার স্বামী বিবেকানন্দকে—যিনি স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘মানুষ’-এর প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সেই মানুষ, যার মধ্যে মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং হাত—এই তিনটি শক্তির সমন্বয় সাধিত হয়েছে। ত্যাগ ও সেবা আমাদের হৃদয়কে প্রসারিত করে। স্বামীজী ভারতের যুগ্ম আদর্শ হিসাবে এই ত্যাগ ও সেবার কথা বলেছেন। আমাদের মনে হয়েছে, ত্যাগ ও সেবার আদর্শ থেকে ভারত কিন্তু সরে আসেনি, যদিও সংবাদমাধ্যমে এর প্রকাশ খুব কম দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। স্বামীজী যে বলছেন—জাতীয় জীবন স্পন্দিত হচ্ছে দরিদ্রের কুটিরে, তা আজও প্রবলভাবে সত্য। ভারতে পার্থিব উন্নয়নের জন্য দারিদ্র কমেছে, নানান সমস্যা কমেছে, আবার নতুনতর সমস্যা এসেছে; কিন্তু তার মধ্যেও ভারতীয় গ্রামীণ জীবন আজও ত্যাগ ও সেবার উপাসনা করে। স্বামীজী যে-কথাটি বলেছেন সেই কথাটির প্রায়োগিক দিকটি দেখতে গেলে আমাদের গ্রামে যেতে হবে। যে-খবরগুলি আমরা খবরের কাগজে রোজ দেখি, সেগুলিই ভারতের একমাত্র খবর নয়; কারণ ভারতের গ্রামে-গঞ্জে ত্যাগ ও সেবার যে-নিদর্শন দেখা যায় তা যদি ছাপা হয় তাহলে প্রতিদিনই একটি মহাভারত তৈরি হবে! বিবেকানন্দের চিন্তা ফল্গুধারার মতো ভারতীয়দের মধ্যে বয়ে চলেছে। তাঁর বলা ভারতের সনাতন ত্যাগ ও সেবার আদর্শ অবশ্যই ভারতীয় জীবনে রয়েছে, সে-কারণে আজও ভারতবর্ষের অস্তিত্ব আছে। শুধু তাই নয়, ভারত অবশ্যই অগ্রগমনের পথে চলেছে। সাময়িক অবক্ষয় থাকলেও বিবেকানন্দের আদর্শ এখানে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে চলেছে।
আপনার খুব দৃঢ় প্রত্যয়—স্বামীজীর বলা ভারতের সনাতন আদর্শ ত্যাগ ও সেবা এখনো বর্তমান রয়েছে! সে–সম্পর্কিত আপনার কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে বলুন।
হ্যাঁ। একটি ছোট্ট ঘটনার কথা বলি—পুরুলিয়া বিদ্যাপীঠের একজন ছাত্র। সে ছিল বিদ্যাপীঠের সেবক ও ক্লাসের ফার্স্ট বয়। মাধ্যমিকের টেস্টেও সে প্রথম হয়েছিল। টেস্টের পরে আমরা তাকে বলেছিলাম : তোমার ক্লাসের পিছনের দিকের যে-দশটি ছেলে আছে তারা পিছিয়ে পড়েছে; তা তুমি কি মনে কর না যে, ওদের জন্য তোমার কিছু করণীয় আছে? আমরা সাধারণত দেখি—যারা ক্লাসে পড়াশোনায় ভাল হয় তারা নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করে, অন্যের কথা ভাবে না। কিন্তু সে বলল : অবশ্যই করণীয় আছে। তারপর সে ঐ দশটি ছেলের জন্য পরীক্ষার আগে পুরো দশটা দিন বের করে এক-একটি ছেলের সঙ্গে এক-এক দিন বসেছিল। সারাদিন আলোচনা করে তার পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে সে কীভাবে এগলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে, আরো ভাল রেজাল্ট করতে পারবে—সেই নিয়ে আলোচনা করেছে। এর জন্য অবশ্যই মনঃসংযোগ, ব্রহ্মচর্যপালন, ধীশক্তিকে বাড়ানোর উপায় ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা করেছে। প্রথম হওয়া সেই ছেলে তার প্রস্তুতির আড়াই মাস সময় থেকে দশটা মূল্যবান দিন দিয়েছিল। আমাদের এটা মুগ্ধ করেছিল। মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশে দেখা গেল, সে প্রথম হতে পারেনি, দ্বিতীয় হয়েছে। রেজাল্ট বেরনোর দিন মনে আছে, সামগ্রিক রেজাল্ট খুব ভাল হলেও ওর ক্লাসের ছেলেরা চুপচাপ, কেননা ঐ ছেলেটি প্রথম হতে পারেনি। আমরাও খুব লজ্জা পাচ্ছি, একটু ইতস্তত বোধ করছি। কিন্তু সে এসে এমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবার সঙ্গে কথা বলে সবাইকে নিয়ে আনন্দের সঞ্চার করল যে, কারো মনে আর কোনো দুঃখই থাকল না! পরে সেই ছেলেটি আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচ.ডি. করে দিল্লিতে এখন সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করছে। অর্থনৈতিকভাবে সে বিদেশের থেকে হয়তো কম বেতনে চাকরি করছে, কিন্তু শুধুমাত্র দেশকে ভালবেসে দেশের সেবা করবে বলে দেশে রয়ে গেল। স্বামীজীর প্রতিষ্ঠা করা রামকৃষ্ণ মিশনের আইডিয়োলজির মধ্যে থেকে সে দেশকে এভাবে ভালবাসতে শিখেছে।
প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের বাইরেও তো এর উদাহরণ রয়েছে!
হ্যাঁ, এই প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার কথা বলি। আমাদের একজন পরিচিত মানুষ আছেন, যিনি দৃষ্টিহীন। বয়স এখন প্রায় সত্তর বছর। তিনি একসময় নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ একাডেমিতে কয়েক মাস কাটিয়েছিলেন। এখনো রামকৃষ্ণ মিশন থেকে সাহায্য পান। তিনি বাঁশি বাজান কিন্তু কারো কাছ থেকে পয়সা চান না। কেউ যদি তাকে সাহায্য করে, তাহলে তিনি সেটি গ্রহণ করেন। গ্রহণ করে তিনি যেটা করেন সেটা বিস্ময়কর—তিনি ঐ অর্থ খুশি হয়ে কারোর ঔষধ কেনার জন্য অথবা বই কেনার জন্য কিংবা কোনো মানুষের অন্নের সংস্থানের জন্য তার কাছে পাঠিয়ে দেন। এমনকী একবার একটি মানুষ তার মেয়ের বিয়ের খরচ কীভাবে জোগাড় করবে বুঝতে পারছে না জেনে তিনি সাহায্যের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় আরেকটি উদাহরণ হিসাবে আমাদের প্রতিবেশী গ্রামের একটি ছেলের কথা বলি। সেই ছেলেটিকে তার মা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কের অধ্যাপক। নিজেকে প্রচারের আড়ালে রেখে পুরুলিয়ার দশটি ছাত্রকে নিয়মিত সাহায্য করে। এরকম কত উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে রয়েছে, যা আমরা হয়তো দেখতে পাচ্ছি কিংবা পাচ্ছি না!
আমরা চোখ–কান খোলা রাখলে দেখব যে, এরকম বহু ঘটনা আমাদের চারপাশে ঘটছে। অনেকে হয়তো করার জন্য প্রস্তুতও, শুধুমাত্র প্রেরণার অভাব রয়েছে। তাই স্বামীজীর আদর্শকে কী করে আমরা যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি? সহজ সাধারণ কী উপায় রয়েছে?
গ্রামে-গঞ্জে কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান জায়গায় গিয়ে দেখছি, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভাল কথা শোনার আগ্রহ রয়েছে। ভাল হওয়ার অদম্য উৎসাহ রয়েছে। তাই কম সংখ্যক অন্য ধরনের ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সামগ্রিক যুবসমাজকে বিচার করা যাবে না। যুবসমাজ স্বামীজীর আদর্শের কথা গ্রহণ করে চলেছে, এখনো। তারা চায় নিঃস্বার্থ ভালবাসা। আমরা যদি কথা দিয়ে, আচরণ দিয়ে, সর্বোপরি জীবন দিয়ে ছাত্রদের স্বামীজীর আদর্শকে বোঝাই তাহলে তারা গ্রহণ করবে। সেজন্যই দরকার আমরা যে-কথাটা মুখে বলছি সেটা জীবনে প্রয়োগ করা। আমাকে পরম পূজনীয় এক সন্ন্যাসী একবার বলেছিলেন : তুমি যদি ক্লাসে চল্লিশজনকে দুটো চোখ দেখ, জানবে তোমাকে আশিটা চোখ দেখছে! বহু যুবসম্মেলনে গিয়ে প্রশ্ন করেছি যে, তোমরা ভাল হতে চাও না খারাপ হতে চাও? সকলেই বলেছে—ভাল হতে চাই। ভাল হওয়ার রাস্তাটা তারা খুঁজছে। আমাদের দায়িত্ব হলো ভাল হওয়ার রাস্তাটা ঠিকভাবে দেখানো। আমাদের রাস্তা দেখাবেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর জীবনের অর্ঘ্য থেকে আমাদের জীবনকে তৈরি করে নেব। এক্ষেত্রে স্বামীজী এইজন্যই যে, তিনিই বলেন—তুমিও পারবে, কেউ ফেলনা নয়, প্রত্যেকের মধ্যে দেবত্ব রয়েছে, প্রত্যেকের মধ্যে অনন্ত সম্ভাবনা আছে, অনন্ত শক্তি আছে। তিনি প্রত্যক্ষভাবে বাণীরূপে বর্তমান—“I am a voice without a form.” যারা সমাজে শিক্ষাসেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তায়। শিক্ষাব্রত—শিক্ষাবৃত্তি নয়। এই ব্রত নিয়ে যেসব মাস্টারমশাই এখনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুঁথিগত শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে লাইফ স্কিল ও ভ্যালু স্কিল—দুটোকে একসঙ্গে যুক্ত করতে চান, তাঁদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের নানান কারণে মাঝে মাঝে হতাশ তো লাগে। নানান দিকে মূল্যবোধের অবক্ষয় কিংবা নানান ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাব চোখে পড়ে। এরকম সংকটের মুহূর্তে আমাদের কী করা উচিত?
এপ্রসঙ্গে একটা গল্প বলছি। গল্পটা আপনারা সকলেই জানেন। একটা বনে আগুন লেগেছে। সব পশু-পাখি নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা দেখছে, জঙ্গলটা পুড়ে যাচ্ছে। সবাই খুব কষ্ট পাচ্ছে। একটা টুনটুনি পাখি ঠোঁটে করে জল নিয়ে গিয়ে আগুনে ফেলছে। এই দেখে অন্য জন্তু-জানোয়াররা অত দুঃখের মধ্যেও হেসে ফেলেছে। তারা বলছে—তুই কী করছিস? টুনটুনি উত্তর দেয়—দেখতে তো পাচ্ছ কী করছি। বাকিরা তখন জিজ্ঞেস করে : ওতে কি আগুন নিভবে? টুনটুনি বলে : না। কিন্তু ঐ জায়গাতে তো আমি বাস করি। আমার যতটুকু সাধ্য, সেই দিয়ে আমি আমার থাকার জায়গাকে রক্ষা করছি। আমরা যে সমাজে তথা এলাকায় বাস করি, সেই সমাজ সম্পর্কে আমরা নিন্দা-মন্দ না করে আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত সামর্থ্যে বিশ্বাস রেখে কাজ করি, তাহলে তার স্থায়ী ফললাভ হবে। হয়তো আমার পরিচিত দুজন মাস্টারমশাই আছেন, আরো দুজন মানুষের পরিচিত ডাক্তার আছেন; এইভাবে আমাদের অনেক পরিচিত মানুষ যাঁরা বিবেকানন্দ-অনুরাগী হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেন—তাঁদের নিয়ে এই চেষ্টাটাকে যদি বাড়াই তাহলে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিবেকানন্দ-সাহিত্য পড়া এবং সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
তবুও যখনি এই ধরনের কিছু সৎ প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, তখন অনেক সময় বাধা আসে। বাধাগুলি আমাদের হতাশ করে তোলে। আমরা মনোবল হারিয়ে ফেলি। উপায় কী?
উপায় বিবেকানন্দ। একটা ঘটনা দিয়েই বলার চেষ্টা করি। আমাদের স্কুলের একটি বেশ দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা ছাত্র—যে ছিল ক্লাসের শেষ তিনজনের মধ্যে। সে দশম শ্রেণি পাশ করে অন্য রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে একবার চিঠি লিখল : স্যার, এখানে এসে দেখছি যে, হোস্টেলের ঘরে প্রত্যেকটি ছেলের বিছানার মাথার ওপরে খেলোয়াড় অথবা অভিনেতার ছবি রয়েছে, তা আমি কী করব? আমি উত্তরে লিখলাম : তোমার কী ইচ্ছে হচ্ছে? ও দ্বিতীয় চিঠিতে বলল, ওর ইচ্ছে হচ্ছে স্বামীজীর ছবি রাখতে। লিখলাম : সেটাই কর, তার পরে দেখ। এই চিঠির দুবছর পর সে লিখছে : স্যার, আপনার মনে থাকতে পারে আমি ছবি প্রসঙ্গে বলেছিলাম। আজকে আমরা স্কুল থেকে বেরিয়ে যাব, এখন কিন্তু প্রত্যেকটি ছেলের বিছানার মাথায় স্বামীজীর ছবি রয়েছে। বিবেকানন্দ নিঃশব্দে তাদের মধ্যে প্রবেশ করেছেন, বিবেকানন্দ-ভাবে তারা প্লাবিত। ভাবুন! একটি ছাত্র যদি হোস্টেলের ষাটজন ছেলের মধ্যে এই ভাব প্রবেশ করাতে পারে, তাহলে আমরা চেষ্টা করলে কি সেটা করতে পারি না?
আসলে চেষ্টাটা দৃঢ় হওয়া দরকার। চেষ্টাটা অত্যন্ত দরকার। ‘Purity, Patience and Perseverance’— স্বামীজীর এই কথাগুলোই আমাদের মনে রাখতে হবে। আমাদের সেগুলো আগে বুঝতে হবে। বুঝে নিয়ে ‘Perseverance’ রাখব। আর যেকোনো কাজেই বাধা আছে। স্বামীজীর কথামতো কিছু মানুষ প্রথমে উপহাস করবে, তারপর বাধা দেবে, কিন্তু তারপরে গ্রহণ করবে। আমরা কেন তাদের দোষ দেব? আমরা কেন সমালোচনা করব? আমরা বরং বিবেকানন্দ-পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। বিবেকানন্দ সত্য, তাই তাঁর প্রদর্শিত পথে চললে সাফল্য আসবেই।
‘স্বামী গহনানন্দ স্মারক রচনা’রূপে এটি প্রকাশিত হলো।